উদাহরণ তৈরি করতে চান আশরাফুল

বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে গায়ে লাগিয়েছেন কলঙ্কের দাগ। বিপিএল দিয়েই আবার নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান মোহাম্মদ আশরাফুল। দীর্ঘ বিরতির পর ফিরেও যে পারফর্ম করা যায়, সেটিই দেখিয়ে দিতে চান নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা ব্যাটসম্যান।
২০১৩ বিপিএলে স্পট ফিক্সিং করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আশরাফুল। প্রথম দফায় ঘরোয়া ক্রিকেটে তার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২০১৬ সালে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পান গত অগাস্টে। এবার তাই আবার খেলতে পারবেন বিপিএলে। গত অক্টোবরে নিলামে তাকে দলে নেয় চিটাগং ভাইকিংস।
আগামী শনিবার এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই চিটাগং খেলবে গত আসরের শিরোপা জয়ী রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। বুধবার মিরপুর একাডেমি মাঠে নতুন দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন আশরাফুল। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন এবারের বিপিএলে তার লক্ষ্যের কথা।
আমি যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি পেয়েছি। পাঁচ বছর নয় মাস বাইরে ছিলাম এই ফরম্যাট থেকে। অন্যায় স্বীকার করেছি এবং প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে। গত দুটি বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। মোটামুটি ভালো খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বিসিএলের এই মৌসুম ভালো হয়েছে। আমার যারা ভক্ত আছেন, তারা অপেক্ষায় আছেন যেন আমি আবার ফিরে আসতে পারি। তাদের জন্য হলেও চেষ্টা করব এই বিপিএলে ভালো খেলতে।
যদি ফিরে আসতে পারি, একটি উদাহরণ তৈরি হবে যে দীর্ঘ সময় বাইরে থেকেও আবার পারফরম্যান্স দিয়ে ফিরে আসা যায়। যদিও এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার পর মোটামুটি পারফর্ম করেছেন আশরাফুল। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে করেছিলেন ৫টি সেঞ্চুরি। যদিও টুর্নামেন্টে তার স্ট্রাইক রেট ও সেঞ্চুরিগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল অনেক। তবে আলোচনায় উঠে আসতে পেরেছিলেন। এবার জাতীয় লিগে পারফরম্যান্স বাজে হলেও পরে রান পেয়েছেন বিসিএলে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা জানেন বলেই আশরাফুল তাকিয়ে বিপিএলে। এখানে ভালো করেই জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান।
আসলে খুবই ভালো লাগছে (বিপিএলে ফিরে)। গত দুই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং ঢাকা প্রিমিয়ার গিলে খেলতে পেরেছি। কিন্তু এই খেলাগুলো আসলে সম্প্রচার হয় না। বিপিএল আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট। এখানে আবার খেলতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
যদি বাংলাদেশ দলের জার্সিটি আবার পরতে চাই, সেটার জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম এটি, আমি আগে থেকেই জানি এবং সবাই জানে। ঢাকা লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছি, কিন্তু কেউ খেলা দেখেনি। শুধু স্কোরগুলো দেখেছে। আমার একটি জায়গা দরকার ছিল, যেখানে সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারব। সেই প্ল্যাটফর্ম পাঁচ বছর পর পেয়েছি। যদি সুযোগ পাই, তাহলে চেষ্টা করব ভালো করার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেলেও এতদিনে অফিসিয়াল হিসেবেই বয়স তার পেরিয়ে গেছে ৩৪। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বয়সে ফেরা কঠিন। আশরাফুল তবু আশাবাদী, ফিটনেস দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন নিজেকে।
যেহেতু আমি একজন ব্যাটসম্যান, যদি ফিট থাকতে পারি, বিশ্বাস করি আরও চার-পাঁচ বছর খেলতে পারব ইনশাল্লাহ। যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখেন, অনেকেই আছেন এমন। নির্ভর করবে ফিটনেসের ওপরে। গত দুই বছরের চেয়ে এখন আমি নিজেকে অনেক ফিট মনে করছি সবদিক দিয়েই। ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স ঠিক থাকলে লম্বা সময় খেলা যায়।
বাংলাদেশ দলে তো অবশ্যই খেলতে চাই। কারণ তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে, ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়তো সুযোগ পেতে পারতাম। সামনে ২০১৯ বিশ্বকাপ রয়েছে। যদিও আমি সেটি নিয়ে চিন্তা করছি না। এর পরও মনে করি, যদি ভালো পারফর্ম করতে পারি, আমার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিতে পারে।

Facebook Comments