শুরু হচ্ছে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

আবারও শুরু হচ্ছে ‌‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’। আর এই আয়োজনের মধ্যমে ঢাকার ছেলেমেয়েরা জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সোমবার (২ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ৩য় ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয় জানান।সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০২১ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘ফুটবল’ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ‘ক্রিকেট’ নিয়েই আমরা ২০২১ ও ২০২২ সালে এই ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করেছি। বিগত দুইবারের মতো এবারের আয়োজনেও আমরা কর্পোরেশনের আওতাধীন ৭৫টি ওয়ার্ডকে সম্পৃক্ত করছি।

কিন্তু এবারকার আয়োজনের পরিসর ও ব্যাপকতা আরও বাড়ানো হয়েছে। ফুটবল ও ক্রিকেটের পাশাপাশি তৃতীয় ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমরা ব্যাডমিন্টন খেলাকে সম্পৃক্ত করেছি।

মেয়র তাপস বলেন, এবারের ক্রীড়া উৎসবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে ৬৪টি দল ফুটবল খেলায়, ৫১টি দল ক্রিকেট খেলায় এবং ৬৪টি দল ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশ নেবে। আয়োজনে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে রাখতে পুরো প্রতিযোগিতাটি ‘নক আউট’ পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হবে।আগামী ৫ জানুয়ারি কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ফুটবলের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত হবে।একই মাঠে আগামী মাসে ফুটবল খেলার সমাপনী অনুষ্ঠান ও সমাপনী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ জানুয়ারি তারিখে গোলাপবাগ মাঠে ক্রিকেট খেলার এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্ট্যাডিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে।

এবার মোট নয়টি মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্টেডিয়ামে ও ৫টি ওয়ার্ডের উন্মুক্ত স্থানে ব্যাডমিন্টন খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

মেয়র বলেন, ক্রিকেট এবং ফুটবল, উভয় ক্ষেত্রেই বিজয়ী দলের জন্য ৭ লাখ টাকা এবং বিজিত (রানার-আপ) দলের জন্য ৫ লাখ টাকা করে অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রণোদনা করা হবে। একইসঙ্গে ব্যাডমিন্টনে বিজয়ী দলকে ৩ লাখ টাকা এবং রানার-আপ দলকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। গতবারের মতো এবারও টেপ টেনিস বলের বদলে ‘কাঠের বলে’ ক্রিকেট ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই আতশবাজির বর্ণিল প্রদর্শনী থাকছে। বর্ণিল আলোকচ্ছটার আবহে মন মাতাতে থাকছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তোজ জোহরা ঐশী ও ডি রকস্টার খ্যাত গায়ক শুভ’র মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা।

মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, একসময় ঢাকার তরুণ-যুবকেরা শহরের মাঠে-ময়দানে, অলি-গলিতে খেলাধুলা করে এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই ফ্যাকাসে। এর অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ন্যূনতম একটি করে খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমাদের সেই উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানেই প্রয়োজনীয় জমির হদিস পাচ্ছি সেখানেই খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছি। আমরা খেলাধুলায় ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিগত ২ বছরে আমরা স্বার্থান্বেষী মহলের বহুমাত্রিক পাঁয়তারায় দীর্ঘদিন ধরে দখলে ৪টি জমি উদ্ধার করেছি।

বিগত ২ বছরে আমরা  ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষ্মীবাজার খেলার মাঠ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগঞ্জ খেলার মাঠ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে টিকাটুলি খেলার মাঠের উন্নয়ন করেছি এবং ইতোমধ্যে সেসব মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা একটি জায়গা উদ্ধার করেছি এবং সেখানে চন্দনকোঠা খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পের আওতায় আমরা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ মাঠ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠের উন্নয়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো সবুজ বলয় (বাসাবো বালুর মাঠ) ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ধুপখোলা খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মেন্দিপুর খেলার মাঠ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো ভূইয়ার মাঠের উন্নয়নে আমাদের কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে আপনাদের অবগত করতে চাই যে, ইতোমধ্যে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সুফল পেতে শুরু করেছি।

বিগত দুটি আয়োজনে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড় আকাশ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড় রাজন অনুর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলে এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফরচুন বরিশালে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোযাড় কাজী অনিক। ফলে ‘ঢাকার ছেলেমেয়েদের এখন আর ফুটবল ও ক্রিকেটের জাতীয় দলে পাওয়া যায় না’– এমন আক্ষেপ ঘোচানোর যে মহতী উদ্যোগ আমরা শুরু করেছিলাম, সে যাত্রার পালে হাওয়া লেগেছে বলা যায়।  আমরা চায়, ঢাকার আগামী প্রজন্ম আবারও এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন খেলায় নেতৃত্ব দিক।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (বিবিএফ) সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাফুফে রেফারি, বিসিবি আম্পায়ার ও বিবিএফ জাজ দিয়ে আমাদের আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আমি আজকের এই সংবাদ সম্মেলন হতে বাফুফে, বিসিবি, বিবিএফ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

এছাড়াও মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, লাবিব গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজসহ যারা আমাদের আয়োজনকে পৃষ্টপোষকতা করছেন, আমি সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। খেলাধুলা শুধু চিত্ত-বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং, তা নেতৃত্ব-শৃঙ্খলা-ধৈর্য-একতা-নৈতিকতা সমুন্নত রাখারও অন্যতম হাতিয়ার। শুধু তাই নয়, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করার প্রমাণিত অদ্বিতীয় মাধ্যমও খেলাধুলা। নিয়মিত খেলাধূলা তরুণ ও যুব সম্প্রদায়কে নানা ধরনের ক্ষতিকর মাদকের হাতছানি হতে শুধু দূরেই রাখে না, অধিকন্তু তাদের মাঝ হতে জঙ্গীবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব দূর করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে শেখায়।

উদ্বোধনী আয়োজনে ফুটবলে ৩৫ এবং ৫২ নম্বর ওয়ার্ড, ক্রিকেটে ৬৮ এবং ৬১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ব্যাডমিন্টনে ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, সারা বিশ্বে যিনি পেলে নামে বিখ্যাত, তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

আয়োজনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আবু নাঈম সোহাগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments