আইপিএল চ্যাম্পিয়ন গুজরাট

গুজরাট টাইটান্সের সঙ্গে কথাটি একদমই মিলে যায়। আইপিএলে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে নেমে প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছেন হার্দিক-রশিদরা। রবিবার প্রথমবার ফাইনাল খেলতে আসা দলটির নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ৯ উইকেটে মাত্র ১৩০ রান করতে পারে রাজস্থান। জবাবে ১১ বল আগে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করেছে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট। শুভমান গিল ওবেড ম্যাকয়কে ডিপ স্কয়ার লেগে বিশাল ছক্কা মারলে শিরোপা উৎসবে মাতে তারা।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এদিন উপস্থিত ছিল রেকর্ড সংখ্যক লক্ষাধিক দর্শক। এমন উৎসব মুখর পরিবেশে আবার সমাপনী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। ভারতের অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান তো পারফর্ম করেছেনই। তার আগে পারফর্ম করেছেন বলিউড তারকা রনবীর সিং। স্টেডিয়ামে আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট জার্সিও উপস্থাপন করেছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)। জার্সিটি লম্বায় ৬৬ মিটার এবং প্রস্থে ৪২ মিটার। জার্সিটিতে আইপিএলে অংশ নেওয়া দশটি দলের লোগোর পাশাপাশি আইপিএল এর লোগোও স্থান পেয়েছিল। সেটার ভেতরে লেখা ১৫ বছর পূর্তি। এমন দৈত্যাকৃতির জার্সিটিকে বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস বুক। আইপিএলের সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে বিসিসিআই এর সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী, বোর্ড সচিব জয় শাহ ও আইপিএল চেয়ারম্যান ব্রিজেশ প্যাটেলের হাতে বিশ্ব রেকর্ডের সনদপত্র তুলে দেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ।

এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনে ১৪ বছর পর দ্বিতীয় শিরোপা জেতার সুযোগ ছিল রাজস্থান রয়্যালসের। কিন্তু ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা। প্রথমবার খেলতে আসা গুজরাটকে কোনও মতে ১৩১ রানের লক্ষ্য দিতে পারে রাজস্থান। গুজরাটকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছেন ট্রেন্ট বোল্ট, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও যুজবেন্দ্র চাহাল। কিন্তু স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান না থাকায় তাদের সেই চেষ্টা বিফলে গেছে। রাজস্থানের অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। তার খরুচে বোলিংয়ের সুযোগ নিয়েছে গুজরাটের ব্যাটাররা। অবশ্য তাদের শিরোপা জয়ের নায়ক মূলত হার্দিক পান্ডিয়া। বল হাতে অবদান ছিল দলটির অধিনায়কের। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। এরপর ব্যাট হাতে ৩০ বলে ৩টি চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ফিরলে জয়ের কাজটুকু অনায়াসেই শেষ করেন শুভমান গিল ও ডেভিড মিলার। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৪৭ রানের জুটিতে ১১ বল আগেই জয় নিশ্চিত করেছে গুজরাট। গিল ৪৩ বলে ৪৫ ও মিলার ১৯ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়াই।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি রাজস্থান রয়্যালসের। শুরু থেকেই অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে ওপেনার যশস্বী জয়েসওয়ালকে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ সামিকে এক চার ও এক ছক্কা মেরে অস্বস্তি কাটিয়ে উঠেন যশস্বী। তবে ব্যক্তিগত ২২ রানের মাথায় যশ দয়ালের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সাই কিশোরীর তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। ১৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি।

প্রথম উইকেটের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় বড় সংগ্রহ পায়নি উদ্বোধনী আসরের চ্যাম্পিয়নরা। আগের ম্যাচে বিরাট কোহলির দলকে বিদায় করে দেওয়ার নায়ক জস বাটলার শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তবে দলের সর্বোচ্চ রান তার ব্যাট থেকেই এসেছে। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ঋদ্ধিমান সাহার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হতেই মূলত চাপে পড়ে যায় রাজস্থান। ৩৫ বলে ৫ চারে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ইংলিশ এই ব্যাটার।

রাজস্থানের বাকি ব্যাটারদের মধ্যে কম-বেশি সবাই শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। জস বাটলার ও যশস্বী জয়েসওয়াল ছাড়া বাকিদের মধ্যে রায়ান পারাগের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। ১৪ রান করেন অধিনায়ক সানজু স্যামসন। ১১ বলে ২ চারে ১৪ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে সাই কিশোরীর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। ক্যারবীয় হার্ডহিটার শিমরন হেটমায়ারও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। বল হাতে গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি ও সাই কিশোরী ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।

 

Facebook Comments