সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে রুখে দিলো ১০ জনের বাংলাদেশ

সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের বিপক্ষে লড়াইটা এমনিতেই ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জের। সেখানে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ কিনা ১০ জনের দলে পরিণত হলো! বিশ্বনাথ ঘোষের লাল কার্ডে একজন কম নিয়ে খেলে হতাশা গ্রাস করলেও ভেঙে পড়েনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ১০ জন নিয়েও বাংলাদেশ ১-১ গোলে ড্র করেছে শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে।

আজ (সোমবার) মালের জাতীয় স্টেডিয়ামে ইয়াসিন আরাফাতের হেডে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ৭৩ মিনিটে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা খেলায় ফেরে। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে উড়ে আসা বল রাকিবের মাথা ছুঁয়ে এলে দূরের পোস্টে ফাঁকায় থাকা ইয়াসিন চমৎকার হেডে জড়িয়ে দেন জালে।

তারপর বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠা। তা হওয়ারই কথা। প্রথমত, ভারতের জালে বল জড়ানো। দ্বিতীয়ত পিছিয়ে পড়া ১০ জনের দলের সমতায় ফেরা। মালের স্টেডিয়ামে জড়ো হওয়া বাংলাদেশের সমর্থকদের আনন্দ দেখে কে! কোচ অস্কার ব্রুজনও মেতে উঠলেন বাঁধভাঙা উল্লাসে। একটা দলের এই অবস্থানে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, ফুটবলে তো প্রতিদিন ঘটে না। এরপর বাকি সময়টা ভারতকে আটকে রেখে জয়ের সমান ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ফলে সাফের দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট হলো জামালদের। আর প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ভারতের পয়েন্ট ১।

সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভয়। যেকোনও সময় এই বর্ষীয়ান স্ট্রাইকার ম্যাচের দিক পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের শুরুতে হয়েছেও তা-ই। ছেত্রীর গোলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়। বিরতির পর দুঃসংবাদ আরও বাড়ে। ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় জামালদের। তারপরও পিছু হটেনি বাংলাদেশ। দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে ইয়াসিন আরাফাতের লক্ষ্যভেদে।

মালের জাতীয় স্টেডিয়ামে একাদশে দুটি পরিবর্তন নিয়ে নামে বাংলাদেশ। জুয়েল রানার জায়গায় সাদ উদ্দিন ও সুমন রেজার বদলে মতিন মিয়া খেলেছেন। ভারত বল দখলে এগিয়ে থাকলেও সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। বল পায়ে রেখে ৪-১-৪-১ ছকে প্রতি-আক্রমণে উঠে খেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রথমার্ধে লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি একটিও। ম্যাচ ঘড়ির ৬ মিনিটে জামালের পাসে ইয়াসিনের দূরপাল্লার শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যায়।

৯ মিনিটে মতিন মিয়ার ডান প্রান্তের ক্রস ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে। দুই মিনিট পর ইব্রাহিমের ক্রসে মতিন লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। ২১ মিনিটে জামালের কর্নারে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গোলকিপার গুরুপ্রিত সিংয়ের পরীক্ষা নিতে পারেনি। ২৬ মিনিটে জামালের ফ্রি কিকে সাদ চেষ্টা করেছিলেন। যদিও এই উইঙ্গারের প্রচেষ্টা পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে গেছে।

বরং ধারার বিপরীতে গিয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠে ২৬ মিনিটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ভারত। উদন্ত সিংয়ের কাটব্যাক থেকে অভিজ্ঞ সুনীল ছেত্রী প্লেসিং করেছেন। ডিফেন্ডার তপু বর্মণ কাছে থেকে কিছুই করতে পারেননি। ৩৮ মিনিটে সুনীল ছেত্রী আবারও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী স্ট্রাইকারের জোরালো শট পোস্ট ঘেঁষে চলে গেছে।

প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো সুযোগটি আসে ৩৯ মিনিটে। প্রতি-আক্রমণে সাদের পাস থেকে বিপলুর শট গোলকিপার বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিহত করেছেন। ৪১ মিনিটে রাহুল ভেকের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফলে পিছিয়ে থেকেই ড্রেসিং রুমে যায় অস্কার ব্রুজনের দল।

বিরতির পর বাংলাদেশ দলের ৫২ মিনিটে আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ আসে। সাদের ক্রসে রাকিব লক্ষ্যে শট নিতে পারলে সমতায় ফেরার সুযোগ ছিল। পরের মিনিটেই বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ। লিস্টন কোলাসোকে পেছন থেকে বাধা দেন বিশ্বনাথ। রেফারি আলসামরানি মাজেদ সরাসরি এই ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড দেখাতে কার্পণ্য করেননি। ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

তবে একজন কম নিয়েও হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। ৭৩ মিনিটে ইয়াসিনের চমৎকার গোলে সমতায় ফেরে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

Facebook Comments