করোনার আড়ালে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ!

মোঃ রায়হান ইসলাম
দিনে-রাতে, ঘরে-বাইরে এসব মশার উপদ্রবে ইতিমধ্যে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী।করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশেও এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায় ২২ মার্চ পর্যন্ত করোনায় মোট সংক্রমণের সংখ্যা ২৭। দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই জন মারা গেছেন। এছাড়া, বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ৪০ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই আগাম পদক্ষেপ না নেওয়া না হলে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। করোনারকারণে সব ফোকাস সেদিকে চলে গেছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের দিকটা দুর্বল হওয়ার শঙ্কা তাদের।বিভিন্ন আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কের পাশে ড্রেন ও ডোবাসহ নানা স্থানে জমে থাকা পানিতে মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে। রাস্তার পাশে খোলা স্থানে দুই-তিনদিনের জমে থাকা তুলনামূলক স্বচ্ছ পানিতেও মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। এসব স্থানে তৈরি হচ্ছে মশার লার্ভা।মশার এমন উৎপাত ভাবিয়ে তুলছে নগরবাসীকে।শীত শেষ হতে না হতে রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। আসছে বর্ষা, ডেঙ্গু আতঙ্ক। মশক নিধনে নানা কার্যক্রম চলমান থাকলেও পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কালক্ষেপণ না করে এখনই সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ তাদের।
সাধারণ লোকজন জানান, ঘরে ও বাইরে সব জায়গায় মশা রয়েছে। এ মশা সবার জন্য সমস্যা। বিশেষ করে বাচ্চা ও শিশুর দিয়ে বেশি আতঙ্কে থাকি। কেননা ডেঙ্গুর-তো ভয় আছে? কে বলবে কিছুদিন আগেই ডেঙ্গুর মতো বড় একটি বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে নগরবাসী।মশার হুল থেকে নিস্তার নেই কয়েল জ্বালিয়ে এমনকি হাত-পা ঢেকেও।
স্বাস্থ্য অধিদফতের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন,গতবারের তুলনায় চলতি বছর রোগী ভর্তির সংখ্যা বেশি ঠিকই, তবে গতবার কিছুটা ইনফরমেশন গ্যাপ ছিল, তথ্যগুলো সেভাবে শুরুর দিকে আসেনি। আবার গত মাসে প্রকাশিত পোস্ট মনসুন সার্ভে অনুযায়ী এবারে আবাসিক এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব কম, কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি।আবাসিক এলাকায় এডিস মশা কমমানে হচ্ছে মানুষ সচেতন হয়েছে। কিন্তু নির্মাণাধীন স্থাপনা, ড্রাম, পরিত্যক্ত মোটরযানসহ পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে এডিস পাওয়া গেছে। এসব কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ হবে না বলে মনে করেন তিনি।৫ মার্চ শুরু হয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত প্রি মনসুন সার্ভে হয়েছে। তখন কিছুটা বৃষ্টি ছিল, যা এডিস মশা বাড়ার উপযোগী।
ব্যবসায়ী মানিক বলেন, সম্প্রতি শহরে ড্রেন সংস্কারের কাজ হচ্ছে। এতে ড্রেনের ময়লা আবর্জনাযুক্ত উম্মুক্ত পানিতে গিজগিজ করছে মশা। এসব মশার উপদ্রবে তারা খুবই অতিষ্ঠ। ডেনের ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি পরিষ্কার করা হয়নি। সেখানে মশা বংশবিস্তার করছে।সামনেই ডেঙ্গুর মৌসুম। এখন জনমনে ডেঙ্গু নিয়ে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে এ মশার উপদ্রবে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এ বছর গরম মৌসুম শুরুর আগেই প্রচণ্ড রকমে মশার উপদ্রব বেড়েছে। বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, ব্যবসা কেন্দ্র, শহর-গ্রাম সবখানেই একই দশা।
সাধারণ লোকজন জানান,ড্রেনে জমে থাকা ময়লা পানিতে বংশবিস্তার করা মশার আবাস্থলে ডেঙ্গু লার্ভার মাত্রা পরিমাপের কোন তৎপরতাও দেখা যায় না।
সাধারণ মানুষ মনে করছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশার উপদ্রব নিধনের জন্য যদি এখনই কার্যকর পদক্ষের না গ্রহণ করে তবে এটিও করোনার মতো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে।

Facebook Comments