ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করুন মির্জা ফখরুল

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আরেকটি ১ ফেব্রুয়ারি আসছে, যে পদ্ধতিতে ঢাকার নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছে। এখনো বলছি, এ ইভিএম ব্যবহার রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না।’
ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আজকে সবাই জনগণের কাছে বলি, তারা অত্যন্ত জোরে তাদের কণ্ঠকে সোচ্চার করুন যে, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএমে কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখ্যান করছি।’
ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা বিএনপি কেন করছে- এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনে কারা থাকবেন সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন। যেহেতু এই মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং এই সরকার রয়েছে যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে পরিচালনা করছে। তাদের ওপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই। এবারকার দুই সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচনটা ইভিএম দ্বারা ভোটগ্রহণ করা হবে। আমরা প্রথম থেকে এর আপত্তি জানিয়ে আসছি। নির্বাচন কমিশনেও আমাদের ডেলিগেশন গিয়েছিল তারা গিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মূল প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনটা কেনো? নির্বাচনের মূল কারণটি হচ্ছে, একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য। সেটা জাতীয় সরকারও হতে পারে, স্থানীয় সরকারও হতে পারে। আমরা বলে এসেছি, এই নির্বাচন কমিশন যোগ্য নন, অদক্ষ। বর্তমানে যে অনির্বাচিত সরকার রয়েছে তাদের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। তারা যে হুকুম করে কমিশন তাই করে। বিগত নির্বাচনে আমরা পুরোটাই দেখেছি, তারা সরকারের পরিচালিত হয়ে নির্বাচন করেছে। যেটা জনগণের যে মতামত তার বিরুদ্ধে গেল। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখে তারা করে ফেলেছে। এই কমিশনকে বিশ্বাস করর আর কোনো কারণ থাকতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমাদের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রকাশ্যে আঘাত করলেন। দুঃখজনকভাবে শুধু না, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনকভাবে ওই দলের (আওয়ামী লীগ) মেয়রপ্রার্থী (আতিকুল ইসলাম) বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব প্রবলেম। এরকম একজন ব্যক্তি যিনি এ কথা বলতে পারেন তা তো মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না।’
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম একটা মাত্র ঘটনা, এটা মেশিন। এরকম হাজারো মেশিন দিয়ে আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। পত্রপত্রিকা খুললে দেখবেন, ব্যাংকগুলো নেই। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ব্যানক্রাফট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে প্রায়ই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একই অবস্থা। সরকারের বাজেট থেকে উল্টো দিতে হয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য। ব্যাংক থেকে টাকা দেদারসে লুট হয়ে যায়। শেয়ার মার্কেট মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। গার্মেন্টস সেক্টরটা আজকে ক্রমান্বয়ের নিচের দিকে যাচ্ছে।’
বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির জন্য যে বিচার আরেক ব্যক্তির জন্য সেরকম বিচার নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দু’বছর আটকে রাখা হয়েছে। যে জামিন তিনি পাওয়ার যোগ্য, যেটা আমার সংবিধানের মধ্যে আছে সেই জামিনও তাকে দেয়া হচ্ছে না শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। নাজমুল হুদা, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মায়া সাহেব (মোফাজ্জল হোসেন মায়া) জামিন পেয়েছেন। এরকম অনেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ দেশনেত্রীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।’
গুলশানের হোটেল লেকশোরে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) উদ্যোগে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন- দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বে ড. এসএম আবদুর রাজ্জাক, আশরাফউদ্দিন বকুল, তানবিরুল হাসান, আসাদুজ্জামান ও মিজানুর রহমান। সেমিনারে তথ্য চিত্রের মাধ্যমের ইভিএমে ভোট কারচুপির নানা দিক উপস্থাপন করা হয়।

Facebook Comments