বিনোদন ডেস্ক :
দেশে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করা সংগঠন হেপাটলজি সোসাইটি। এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে রাজধানীসহ দেশবাসীকে পানি পানে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়াসহ বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাইফুল ইসলাম এলিন।
সেমিনারে বলা হয়, অধ্যাপক মবিন খানের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। যা বাংলাদেশের জন্ডিস হিসেবে পরিচিত।এই রোগের অতীতের প্রভাব উল্লেখ করে বিএসএমএমইউর লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. শাহিনুল আলম বলেন, গত বছরের ঠিক এই সময় চট্টগ্রাম মহানগরীতে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। এবং কয়েক জনের প্রাণহানিও ঘটেছিল তখন।
তিনি বলেন, বছরের এ সময় বৃষ্টির কারণে শহর এলাকায় পানি সরবরাহ দূষিত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। আবার গরমের কারণে মানুষের যত্রতত্র অনিরাপদ পানির শরবত পান করার প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে জন্ডিসের প্রকোপ বেশি হয়। তবে গ্রামের চেয়ে শহরে এর প্রভাব বেশি।
বাংলাদেশ জন্ডিসের মূল কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস উল্লেখ করে হেপাটলোজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ বছর গরমের মাঝেই রমজান মাস। এ কারণে ই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
বৃষ্টির সময় শহরের সুয়ারেজ লাইন থেকে পানির লাইন দূষিত হয়। ২০০৪ সালে বন্যার পর ঢাকা শহরে ব্যাপক আকারে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস ছড়িয়ে পড়ে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক হাজারেরও বেশি ছাত্র আক্রান্ত হয়। এমনকি এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে তখন।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের কারণে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) হয়ে থাকে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও সংগঠনটির বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক গোলাম আযম।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিস ই ভাইরাস আক্রান্তদের ৪ ভাগের ৩ ভাগ লোকই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর। অর্থাৎ এদের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছর। এই ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে ১৫ থেকে ৪৫ দিন বিশ্রাম নিতে হয়।
এই ভাইরাসে সাধারণভাবে মৃত্যুর হার শতকরা এক ভাগেরও কম। কিন্তু গর্ভবতী মায়েরা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ। তবে এই ভাইরাসের ক্ষতির দিক তুলে ধরে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার ৬ টি পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
পরামর্শ হিসেবে বলা হয়, বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার নিশ্চিত করা। পানি ৩০ মিনিট ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। হোটেলে বা ঘরে বাসি খাবার বর্জন করতে হবে। রাস্তার খোলা জায়গায় শরবত খাওয়া বন্ধ করতে হবে। খাওয়ার আগে ও মল ত্যাগের পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। বাসার পানির ট্যাংক চার মাস পর পর ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। চোখ হলুদ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।