সুমন-লিটনের নৈপুণ্যে প্রেসিডেন্টস কাপ চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহর দল

মোঃ রাসেল :

রাউন্ড রবিন লিগের দুই ম্যাচে নাজমুল একাদশের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশ। দুই ম্যাচেই সহজ জয় পেয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ফলে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচেও ফেবারিট ছিল তারা। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসেই যেনো সবকিছুর হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় ফিরিয়ে দিলো মাহমুদউল্লাহ একাদশ। নাজমুল-মুশফিকদের সহজেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর দল।

ফাইনাল ম্যাচটি একপেশে করে ফেলার মূল কারিগর পেসার সুমন খান ও স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান লিটন দাস। প্রথমে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন সুমন, একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন নাজমুল একাদশের ব্যাটিং লাইনআপ, মাত্র ৩৮ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। পরে ছোট লক্ষ্যে শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের পসরা সাজান লিটন, দর্শনীয় সব শটে ১০ চারের মারে খেলেন ৬৯ বলে ৬৮ রানের ইনিংস।

সুমন-লিটনের নৈপুণ্যে ২০.২ ওভার তথা ১২২ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। আগে ব্যাট করে মাত্র ১৭৩ রানে অলআউট হয়েছিল নাজমুল একাদশ। জবাবে লিটনের পর ফিফটি করেন ইমরুল কায়েসও। নাঈম হাসানের বোলিংয়ে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে দলের শিরোপা নিশ্চিত করেছেন ইমরুল।

রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ছন্দে ফেরার আভাস দেন আগের চার ম্যাচে রান না পাওয়া। তাসকিনের করা অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে গিয়ে আলতো ছোঁয়ায় কভার দিয়ে চার মারেন লিটন। সেই যে শুরু, তার ব্যাটিং সৌন্দর্য্য দেখা গেছে ইনিংসের ২৭তম ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত।

টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচ মিলে সাকুল্যে ৪৩ রান করতে পেরেছিলেন লিটন। নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য ফাইনাল ম্যাচটিকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। মাত্র ৪৭ বলে সাত চারের মারে করেন ফিফটি, আউট হওয়ার বাউন্ডারি হাঁকান আরও ৩টি। সবমিলিয়ে ১০ চারের মারে করেন ৬৮ রান। তার সঙ্গে জুটি বেধে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন ইমরুলও।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটনকে প্রাথমিক সঙ্গ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৪৮ রানের জুটি গড়ে দলীয় ৬৬ রানের সময় তিনি ফিরে যান ৩২ বলে ১৮ রান করে। এরপর ইমরুলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৬৩ রান যোগ করেন লিটন। তিনি সাজঘরে ফেরেন ২৭তম ওভারের প্রথম বলে। তখন জয়ের জন্য মাত্র ৪৫ রান বাকি ছিল মাহমুদউল্লাহ একাদশের।

পাঁচ নম্বরে নেমে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাকি রানটুকু করতে সময় নেয়ার পক্ষপাতি ছিলেন না। তাই শুরু থেকেই খেলতে থাকেন আক্রমণাত্মক ঢঙে, তার দেখাদেখি হাত খুলে খেলেন ইমরুলও। দুজন মিলে মাত্র ২১ বলেই করে ফেলেন ৪৮ রান, ইনিংসের ত্রিশ ওভার পূরণ হওয়ার আগেই দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।

পুরো টুর্নামেন্টে কিপটে বোলিং করা নাঈম হাসানকে পরপর দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন ইমরুল। তার আগে তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি, শেষপর্যন্ত ১ চারের সঙ্গে ৬ ছয়ের মারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ৩ চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মারে করেছেন ১১ বলে ২৩ রান।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা নাজমুল একাদশের পক্ষে সুমন খানের আগুনে বোলিংয়ের সামনে প্রতিরোধ গড়েছিলেন কেবল ইরফান শুক্কুর। দলের তারকা পারফরমারদের অনুজ্জল ব্যাটিংয়ের দিনে ইরফান খেলেছেন ৭৭ বলে ৭৫ রানের ইনিংস। মূলত তার ইনিংসে ভর করেই ১৭৩ রানের বলার মতো একটা সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে নাজমুল একাদশ।

আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহীম এদিন করেছেন ১২ রান, আশা জাগিয়েও ৩২ রানের বেশি করতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বরাবরের মতো হতাশ করেছেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার (১১ বলে ৫) ও সাইফ হাসান (৫ বলে ৪ রান), রানের খাতাই খুলতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব।

মাত্র ৬৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা নাজমুল একাদশের ইনিংসটা ভদ্রস্থ করেন ইরফান শুক্কুর ও তৌহিদ হৃদয়। দুজন মিলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। একপাশ আগলে রেখে খেলতে তৌহিদ হুট করেই ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা ধরা পড়েন মিড উইকেটে, খেলেন ৫৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে একা পড়ে যান ইরফান।

শুরু থেকেই ছন্দময় ব্যাটিং করতে থাকা ইরফান শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান, দলের ইনিংসটি পৌঁছে দেন ১৭৩ রানে। আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী রুবেল হোসেনের বলে স্কুপ করতে সরাসরি বোল্ড হন ইরফান। তার আগে ৮ চার ও ২ ছয়ের মারে খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস।

নাজমুল একাদশে ধ্বস নামানো বোলিং করে ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সুমন খান, রুবেলের শিকার ২ উইকেট। বাকি তিনটি উইকেটে নাম লিখিয়েছেন এবাদত হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ।

Facebook Comments