২৬টি শর্তপূরণ সাপেক্ষে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি

রাষ্ট্রবিরোধী বা উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। মিছিলসহ সমাবেশে আসতে পারবেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রবেশপথে আর্চওয়ে বসানোসহ নিজস্ব উদ্যোগে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
 
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে পুলিশ অনুমতি দিলেও এই সমাবেশ করতে দলটিকে মানতে হবে দুই ডজনের বেশি শর্ত।
 
সমাবেশে রাষ্ট্রবিরোধী বা উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। মিছিলসহ সমাবেশে আসতে পারবেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রবেশপথে আর্চওয়ে বসানোসহ নিজস্ব উদ্যোগে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখতে হবে।
 
এ ধরনের মোট ২৬টি শর্তপূরণ সাপেক্ষে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
 
ডিএমপি সদর দপ্তর মঙ্গলবার এক চিঠিতে বিএনপিকে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি জানায়। অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে আছেন।
 
বিএনপির পক্ষ থেকে এর আগে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন জানানো হয়। এর জবাবে মঙ্গলবার ডিএমপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
 
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে ২৬টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে দলটি ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারবে।
 
নয়াপল্টনে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি না দেয়ার কারণ হিসেবে যানজট ও জনভোগান্তি সৃষ্টির কথাও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
 
বিএনপিকে ডিএমপি দেয়া শর্তে বলা হয়:
 
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
 
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
 
৩. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
 
৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
 
৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
 
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ গেটে আর্চওয়ে স্থাপন এবং সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
 
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভেহিক্যাল স্ক্যানার/সার্চ মিররের মাধ্যমে সমাবেশে আগত সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।
 
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
 
৯. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না।
 
১০. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
 
১১. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরের রাস্তা বা ফুটপাতে কোথাও সমাবেত হওয়া যাবে না।
 
১২. আজান, নামাজ ও ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
 
১৩. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দান বা প্রচার করা যাবে না।
 
১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
 
১৫. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
 
১৬. সমাবেশস্থলের আশপাশের রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া, যানবাহান ও জন চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
 
১৭. পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, রড ব্যবহার করা যাবে না।
 
১৮. আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
 
১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য দেয়া যাবে না।
 
২০. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
 
২১. মিছিলসহ সমাবেশস্থলে আসা যাবে না।
 
২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্ক করতে হবে, মূল সড়কে কোনো গাড়ি রাখা যাবে না।
 
২৩. সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
 
২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে।
 
২৫. উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিক অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
 
২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই এই অনুমতি আদেশ বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
Facebook Comments