দিনে নিজ নিজ পেশায়, রাতে ডাকাতি

তারা কেউ পোশাককর্মী, ড্রাইভার, হেলপার, রাজমিস্ত্রী, কেউ আবার টেইলার দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় রাতে তারা সংঘবদ্ধভাবে অংশ নিতো দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে। গেলো বেশ কয়েকবছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে ১০-১২ জনের এই চক্রটি। চক্রের ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়ক থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেছে এবং জামিনে বের হয়ে আবার একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) কাওয়ানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামীম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০), মামুন (২৪)।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার দুই জন ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ।

খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত চক্রটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানে ডাকাতি করতো। তারা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই ডাকাতি সম্পন্ন করে থাকে। ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টস এর পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃত পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দিয়ে গতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়। পরে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবি করে এবং ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।

আর তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মুসা ডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়িটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল আনলোড করে বলেও জানান খন্দকার মঈন।

এছাড়াও, ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোনও নির্জন স্থানে ফেলে যায়। বিগত এক বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে। আগে তারা অন্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশ নিতো।

Facebook Comments