ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক জুয়েলের ওপর হামলা: গ্রেফতার ৮

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম জুয়েল ও ক্যামেরা পারসন আজাদ আহমেদ সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় মূল আসামি ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভূঁইয়াসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে শেরে বাংলানগর থানা পুলিশ।

বাকিরা হলেন- মো. হাফিজ, মো. মহসিন ভূঁইয়া, মো. সুমন মিয়া, মো. মাসুম বিল্লাহ, মাহবুব হোসেন, আসিফ আকবর ও মাকসুদুল্লাহ।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) শেরে বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ডিবিসির রিপোর্টার ও ক্যামেরা পারসনকে মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভূঁইয়াসহ ৭-৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান ওসি উৎপল বড়ুয়া।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভিক্টর ট্রেডিং কর্পোরেশনে মেডিক্যাল সরঞ্জামাদী ক্রয় ও সরবরাহে অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গেলে আসামিরা তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে রুমে আটকে সঙ্গে থাকা ভিডিও ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, মোবাইল, মানিব্যাগ ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয় এবং কর্ডলেস মাইক্রোফোন ভাঙচুর করে। এসময় আসামিরা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয় এবং দুজন সাংবাদিককে মারধর করে। এক পর্যায়ে আসামিরা অনিয়মের সব ডকুমেন্ট রেখে দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে আহতরা সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর তালতলা এলাকায় ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনে মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ক্যামেরা ভাঙচুর ও ফুটেজ ডিলেট করে দেয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভূঁইয়ার সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই সঙ্গে রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম জুয়েলকে হত্যার জন্য সন্ত্রাসীরা তার গলা টিপে ধরেছিলেন বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে প্রথমে ডিবিসির ক্যামেরা পারসন আজাদ আহমেদকে সন্ত্রাসীরা মারধর এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করে। পরে জোরপূর্বক ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয় সন্ত্রাসীরা। তাদের কাছে ক্যামেরা ফেরত চাইলে কাওছার ভূঁইয়ার নির্দেশে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী আমাকে ও আজাদকে এলাপাতাড়ি মারধর করে। এতে আমরা দুজনেই মারাত্মক আহত হই।

তিনি বলেন, কাওছার ভূঁইয়া আমাদের কোনো কথা শুনেননি। উল্টো চড়াও হয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাকে হত্যার জন্য কাওসার ভূঁইয়াসহ তার কয়েকজন সন্ত্রাসী আমার গলা চেপে ধরে। কোনোভাবে আমি তাদের হাত থেকে নিজের প্রাণ বাঁচাই।

আহত সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সহকর্মীরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকুসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এক বিবৃতিতে জুয়েলের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পাশাপাশি সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাঁধা দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

Facebook Comments