রশিতে বেঁধে মা-মেয়েকে নির্যাতন: ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় উপজেলার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। চকরিয়া থানায় করা মামলায় মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে নির্যাতিতা পারভিন বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। বাদী এ ঘটনায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে মারধরের অভিযোগ এনেছেন।

এ মামলায় আসামিদের মধ্যে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম ছাড়া নাম উল্লেখ করা অপর তিনজন হলেন- উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন(৩২)।

মামলা সূত্রে জানা যায়,গত ২১ আগস্ট দুপুরে পারভিন বেগম,তার ছেলে এমরান,ছেলের বন্ধু ছুট্টু এবং দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে চকরিয়ার হায়দার নাশি এলাকায় ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন।তারা প্রথমে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানি হাটে আসেন।তারপর সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত বেবি ট্যাক্সিতে করে চকরিয়ার হারবাং লাল ব্রিজ নামক এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক তাদেরকে ধাওয়া দেয়।

এতে সিএনজি চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহর চাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে নিয়ে যায়।সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদেরকে আটক করে কিল ঘুষি মারতে থাকে।এ সময় ওই অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার,মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেয়।এরপর তাদেরকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।

মামলার বাদী আরও উল্লেখ করেছেন,ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে।মিরানুল ইসলাম প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারেন।এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকেন।একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করেন।সন্ধ্যা ৬টার দিকে হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

পারভিন বেগম আরও জানান,গরু চুরির ঘটনা মিথ্যা।তাদেরকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন,এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। তিনি মা মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগিতা করেছেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশ গত সোমবার ভোর রাতে নাছির উদ্দিন (২৮), নজরুর ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। তাদেরকে ওই দিনই চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

Facebook Comments