ঢাকার প্রশাসনিক কাঠামো বদলে যাচ্ছে

মানসম্মত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকার প্রশাসনিক কাঠামোকে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম নামে চারটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এডিজি) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে জায়গা করে নিতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, নগরবাসীকে যথাযথ সেবা প্রদানের জন্য একটি ১৫ থেকে ২০ তলা ভবন স্থাপনের চিন্তা করছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। যেখান থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা। এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরি করে তা সেবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামতসহ রূপরেখাও নির্ধারণ করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তৈরি করা ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বিতরণ, সনদ যাচাই-বাছাই, বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৃত্যুজনিত অনুদান, বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা, সার ডিলার নিয়োগ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সনদ প্রদান, প্রবাসীদের বৈবাহিক তথ্য ও অভিযোগ নিষ্পত্তি, এম ক্যাটাগরির ভিসা তদন্ত, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক পদার্থের সনদ, যাবতীয় সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি রাজস্ব আদায়, অধিগ্রহণ করা ভূমির রেকর্ড তৈরি ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, ইট পোড়ানোর লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোঁরার নিবন্ধন এবং লাইসেন্স ইস্যু, সিনেমা হলের অনাপত্তিপত্র ও লাইসেন্স প্রদান, এসিড ব্যবহার ও বিক্রয় লাইসেন্স, জুয়েলারি ডিলারের লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনসহ বিভিন্ন পরীক্ষা পরিচালনা, কৃষি, অকৃষি, অর্পিত, পরিত্যাক্ত, বিনিময় জমিসহ বিভিন্ন সায়রাতমহলের দেখভাল, ট্রেজারি ও রাজস্ব সংক্রান্ত কাজ, প্রকাশনা সংক্রান্ত কাজ, দলিল অবমূল্যায়ন ও সার্টিফিকেট মামলার কাজ, স্থানীয় সরকার ও এনজিও সংক্রান্ত কাজ, আইনশৃঙ্খলা ও প্রটোকল সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করা হয়।
কাজের পরিধি বিবেচনায় দেশের অন্য যে কোন জেলার চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পরিধি ব্যাপক। তাই যথাযথ নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্য যে কোন জেলার চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের জনবল ও অবকাঠামো বেশি দরকার।
জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। তবে ভাসমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সেই সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এই জনসংখ্যা দেশের সব চেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের জনসংখ্যার তুলনায় প্রায় ২০গুন বেশি। গাজীপুর জেলার তুলনায় পাঁচ গুন বেশি। কুমিল্লা জেলার তুলনায় তিনগুন, চট্রগ্রাম জেলার তুলনায় দ্বিগুন এবং ময়মনসিংহ জেলার তুলনায় তিনগুন বেশি। শুধু তাই নয় কোন কোন জেলার তুলনায় ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি। অথচ মেহেরপুরসহ উল্লিখিত জেলাসমূহের জনগণকে সরকারি সেবা প্রদানে যে সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে তার চেয়ে ঢাকায় কিছুটা বেশি। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে তা কোনোভাবেই যথেষ্ঠ নয়।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে যেমন মানসম্মত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ঠিক তেমনই রাজধানীমুখী জনশ্রোত থামানোর জন্য ঢাকার মতো বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকার যানজট নিরসনে বিভাগীয় শহরগুলো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কার্যকর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে ঢাকায় প্রতি কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে।
উল্লেখিত পরিস্থিতিতে, দেড় কোটি জনগোষ্ঠীকে নির্ধারিত-অনির্ধারিত সেবা দিতে গিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই সময়ে জনসেবার দিক বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ বিভাগের জনবল ও অবকাঠামো যথেষ্ঠ পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বিপুল জনগোষ্ঠীর ঢাকায় জনসেবা নিশ্চিত করা, ভূমি রাজস্ব আদায়, অন্যান্য সরকারি সেবা প্রদানের জন্য জনবল ও অবকাঠামো বৃদ্ধি করা একান্তই সময়ের দাবি। সেই ক্ষেত্রে ঢাকার উত্তর,দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম পয়েন্টে উপ সচিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চারটি পদসহ অন্যান্য জনবলের পদ সৃষ্টি করতে হবে। পৃথকভাবে ভূমি সার্কেল, তহসিল, রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ কমপ্লেক্সসহ সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল বিভাগ ও দপ্তরের পর্যাপ্ত কর্মচারি নিয়ে ১৫ থেকে ২০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিকভবন বা ওয়ান স্টপ কমপ্লেক্স স্থাপন করা যেতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো পত্রে আরো বলা হয়েছে, এটি একটি ধারণাপত্র। ভূমি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঢাকাকে তাদের চাহিদা মোতাবেক সে বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। ভূমিসহ সেবাসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

Facebook Comments