পানি বিশুদ্ধ,ময়লা হয় পাইপলাইনে

ওয়াসার প্রকৌশলী ও কে এম সহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন,আজ শরবত খাবেন না, জুরাইন এলাকার পাইপ লাইন দ্রুত ঠিক করে শরবত খাবেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে জুরাইন ও পূর্ব রামপুরা থেকে পাঁচজন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে আসেন। রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওয়াসার পানি কতটা ‘সুপেয়’, তা দেখানো ও সেই পানি দিয়ে শরবত তৈরি করে এমডিকে পান করানোর জন্য তারা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এখানে আসেন। কাচের জগে ও বোতলে ওয়াসার পানি, গ্লাস, লেবু ও চিনির প্যাকেট নিয়ে ওয়াসার ভবনের সামনে তারা বসে আছেন। তবে এখনো এমডির দেখা পাননি।
শরবত খাওয়ানোর এই উদ্যোগের নেতৃত্বে দেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান। দুপুরের দিকে তাদের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াসার প্রকৌশলী ও কে এম সহিদ উদ্দিন।
এ সময় সহিদ উদ্দিন বলেন,পাইপ লাইনের ত্রুটির কারণে ওয়াসার পানি দূষিত হয়ে থাকতে পারে, তবে ওয়াসার পানি সুপেয়।
২০১৩ সালে একবার এমন সমস্যা হয়েছিল। তখন এমডি সেটার সমাধান করে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন এমডি যে বলছেন, প্রত্যেকটা বাড়িতে সুপেয় পানি পাওয়া যায় তা সঠিক নয়। এর উত্তরে ওয়াসার প্রকৌশলী বলেন, ‘আপনাদের যার যার প্রশ্নের উত্তর আপনাদের নিজেদের কাছেই আছে।’
যারা কমপ্লেইন করেছে তাদেরটা সলভ করবেন নাকি পুরো ঢাকায় ঠিক করবেন- এর জবাবে সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘পুরো ঢাকা না, যারা যারা কমপ্লেইন নিয়ে আসবেন সেখানে গিয়ে আমরা সমস্যার সমাধান করবো। তাহলে আশেপাশের সব মানুষ ভালো পানি পাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ঢাকা শহরে ১০টি জোন আছে। প্রত্যেকটা জোনে লক্ষ্য বলা আছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে জোনে গিয়ে কমপ্লেইন দিলে আমরা সেটা ঠিক করে দিয়ে আসবো।’
এ সময় পানির কোনো সমস্যা হলে ১৬১৬২ নম্বরে কল দিলে তিনদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হয় বলেও জানান প্রকৌশলী সহিদ উদ্দিন।
গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত মাইডাস সেন্টারে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।’
তবে টিআইবি থেকে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। গত শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। টিআইবি যে পদ্ধতিতে এ গবেষণা করেছে সেটি একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক। এটি পেশাদারি গবেষণা হয়নি। ৩৩২ কোটি টাকার অপচয়ের বিষয়ে টিআইবির গবেষণা অনুমান নির্ভর ও বাস্তবতা বিবর্জিত। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি উৎস থেকে গ্রাহকের জলাধার পর্যন্ত পানি সম্পূর্ণ শতভাগ বিশুদ্ধ ও নিরাপদ।’
জুরাইন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান ওয়াসার এমডির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকে একজন এ রকম কথা কীভাবে বলেন!’
তিনি আরো বলেন, ওয়াসার এমডিকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া পানির জন্য এত দিন যে বিল দিয়ে এসেছেন, তা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। বলেন, বিশুদ্ধ পানি না দেওয়া পর্যন্ত তারা পানির বিল দেবেন না।মিজানুর রহমান স্ত্রী–সন্তান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আসেন। তার হাতে থাকা কাচের জগে ঘোলাটে পানি দেখিয়ে জানান,তা ওয়াসার পানি।
মিজানুর রহমান জানান, তারা পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা। সেখানে ৩৫ বছর আগে ওয়াসার লাইন বসানো হয়। শুরুর ১০ বছর পানি ভালো ছিল। এরপর পানি নোংরা হতে শুরু করে। এখন সেই পানি ফুটিয়েও খাওয়ার অবস্থা নেই। ড্রেনের পানির মতো নোংরা পানি আসে। এটা তো খাওয়া দূরের কথা গন্ধে হাতে নেওয়াই যায় না। নানাভাবে ওয়াসাকে জানানো হয়। ২০১২ সালে বর্তমান এমডি বরারবর সাড়ে তিন হাজার স্বাক্ষর নিয়ে আবেদনও করা হয়। উনি এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি।
মিজানুর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এ অবস্থায় একজন এমডি কীভাবে বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ! আমার এর উত্তর জানতে চাই। তাই আমরা এই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়াতে এসেছি।’এমডির জন্য অপেক্ষারতদের একজন পূর্ব রামপুরা থেকে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছরের কোনো শিশুও তো বলবে না যে ওয়াসার পানি ভালো।’তিনি আরো বলেন, ‘পানির ট্যাংকে যদি ময়লা জমে, তা তো গায়েবি ময়লা না। ওয়াসার নোংরা পানি থেকেই সে ময়লা জমে।’

Facebook Comments