সরকারি চাকরিজীবীরা এবার চিকিৎসাবীমা পাচ্ছেন

সরকারি চাকরিজীবীরা আসছে চিকিৎসা বীমার আওতায়। উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকার চিকিৎসা বীমা চালুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য দূর করতে নতুন উদ্যোগ
চিকিৎসা বীমার আওতায় কোনো সরকারি চাকরিজীবী কিংবা পরিবারের সদস্য অসুস্থ হলে তার পুরো চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। এজন্য প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর বেতন থেকে অল্প পরিমাণ অর্থ (যা এখনও নির্ধারণ হয়নি) কেটে নেয়া হবে।
বিশেষ করে হাসপাতালের বেড ভাড়া, কনসালটেশন ফি, রুটিন পরীক্ষা, ছোট-বড় অস্ত্রোপচার খরচ ও ওষুধ কেনার পুরো খরচ বহন করবে সরকার। এ বীমা চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের কমিটি করেছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে। আসন্ন বাজেটে এ বীমার ঘোষণা আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (বীমা) অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল এ কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা বীমার রূপরেখা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এর কাজ শেষ হবে। এরপর প্রস্তাবটি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পাঠানো হবে।সূত্রমতে, চিকিৎসা বীমার খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসা বীমার সুবিধা নিতে একজন চাকরিজীবীকে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা করতে হবে।১-৫ লাখ টাকার মধ্যে ৯টি স্লাব থাকবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেড ও পদবি অনুযায়ী এসব স্লাবে বীমা করতে হবে। এ বীমার আওতায় উল্লিখিত সব সুবিধা নিতে সরকারি চাকরিজীবীদের বাৎসরিক একটি প্রিমিয়াম (বীমার কিস্তি) দিতে হবে। প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ হবে বীমার মোট অঙ্কের ওপর। অর্থাৎ বীমার টাকা বেশি হলে প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়বে। আর বীমার অঙ্ক কম হলে প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণ কমবে।গত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে বিগত সরকার ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনা হয়। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা বীমা চালুর প্রস্তাব আসে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায়।ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আকস্মিক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করার মতো পৃথক কোনো হাসপাতাল নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসা নিতে হয়। দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে পরিবারগুলো আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সব গ্রেডের কর্মচারীর চিকিৎসার জন্য মাসিক দেড় হাজার টাকা খুবই অপ্রতুল। আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বীমার আওতায় আনা যেতে পারে।
ওই চিঠি পেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খসড়া প্রণয়নের পাশাপাশি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্য সচিব হলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব (বীমা) মো. সাঈদ কতুব। সদস্যরা হলেন এফআইডির যুগ্ম সচিব (বীমা) মো. হুমায়ুন কবির, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রতিনিধি।
সূত্র জানায়, কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে জীবন বীমা কর্পোরেশন, বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কাছে পৃথক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহেই এসব প্রস্তাব কমিটিতে আসার কথা রয়েছে।

Facebook Comments