প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হার বাংলাদেশের

প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হার বাংলাদেশের. টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর আগে একবারই স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে স্কটিশরা হারিয়ে দিয়েছিল। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের ধারা ধরে রাখলো ইউরোপের দেশটি।

ওমানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ হেরে গেলো ৬ রানের ব্যবধানে। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লজ্জাজনক এই পরাজয় হলো সঙ্গী।

স্কটল্যান্ডের করা ১৪০ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে থেমে গেছে ১৩৪ রানে।

২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩৪ রানে। স্কটল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে সংগ্রহ করে ১৬২ রান। রিচি বেরিংটন করেন ১০০ রান। জবাবে বাংলাদেশ ১৮ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১১৮ রানে। সে ধারাবাহিকতা ৯ বছর পরও ধরে রাখল টাইগাররা। বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে নিজেদের মেলে ধরতে পারলো না স্কটল্যান্ডের মত দলের সামনে।

শুরুতেই দুই ওপেনারের ব্যর্থতা বাংলাদেশের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সূচনা করে। এরপর সাকিব আর মুশফিকের মাত্রাতিরিক্ত স্লো ব্যাটিংই মূলতঃ বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে। তারা দু’জন চেষ্টা করেছেন উইকেট না হারিয়ে ধরে খেলার। কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রচুর বল নষ্ট করেছেন। সাকিব ২৮ বল খেলে করেছেন ২০ রান। টেস্ট ক্রিকেটের চেয়েও জঘন্য ব্যাটিং।

জয়ের জন্য ১৪১ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নতজানু বাংলাদেশের ব্যাটিং। অফফর্ম থেকে বেরই হতে পারছেন না সৌম্য সরকার। একেকবার একেক পজিশনে খেলেও ভাগ্যবদল হচ্ছে না তার। এবার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরের পথ ধরেছেন সৌম্য।

ফলে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খেয়েছে টাইগাররা। জশ ড্যাভেকে মিডউইকেটে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার, ৫ বলে করেছেন ৫ রান।

এরপর লিটন দাসও হতাশ করেছেন। তারও সংগ্রহ মাত্র ৫ রান (৭ বলে)। ব্র্যাড হোয়েল স্লোয়ার বুঝতে না পেরে মিডঅফে ক্যাচ লিটন।

১৮ রানেই সাজঘরে দুই ওপেনার। শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ। সেখান থেকে অভিজ্ঞ যুগল সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল টাইগাররা।

দু’জনের ব্যাটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ওঠে। সাকিব-মুশফিক কিছুটা ধীর গতির ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে বিপর্যয়মুক্ত করার চেষ্টা করলেও যেই না উইকেটে সেট হবেন, অমনি আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রিভসের বলে ম্যাকলয়েডের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। ২৮ বল খেলে মাত্র ২০ রান করলেন তিনি।

দুই ওপেনার এবং সাকিব আল হাসান যখন সাজঘরে ফিরে যান, তখন উইকেটে আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই প্রদিপও নিভে গেলো এক ফুৎকারে। ৩৬ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

দীর্ঘদিন রানের দেখা পাচ্ছিলেন না মুশফিক। আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যখন তার ব্যাট কথা বলছিল, তখন মনে হচ্ছিল বুঝি আজ মুশফিকেরই দিন। কিন্তু না, চিরাচরিত ভুলটাই করলেন তিনি। লেগ ব্রেক বলটি গুগলি করেছিলেন ক্রিস গ্রিভস। সেটিকে স্কুপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। হয়ে গেলেন বোল্ড। এই শটটি এ সময় মুশফিক না খেললেও পারতেন।

মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিতি আছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। মাঠে নেমে দুটি বাউন্ডারি মেরে সে পরিচয় খানিকটা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আফিফ হোসেন ধ্রুব দলকে টেনে তোলার চেয়ে মহাবিপদে ফেলে রেখেই আউট হয়ে যান মাত্র ১২ রান করে।

এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ ছক্কা মেরে তোলপাড় তুলে দেয়া নুরুল হাসান সোহানও যোগ দিলেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে। তিন বল নষ্ট করে দিয়ে গেলেন, কোনো রান না করেই।

একটি ছক্কা মেরে আশার আলো খানিকটা জ্বেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যখন দলের খুব প্রয়োজন, তখনই আউট হয়ে যান ব্র্যাড হুইলের বলে ম্যাকলয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শেষ মুহূর্তে মেহেদী হাসান ৫ বলে ১৩ এবং সাইফউদ্দিন ২ বলে ৫ রান নিয়ে চেষ্টা করেন জয় তুলে নেয়ার। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি।

ব্র্যাড হুইল, জস ডেভি, লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রিভস এবং মার্ক ওয়াটের বলেই মূলতঃ নাকানি-চুবানি খেলো বাংলাদেশ। এই পরাজয়ের ফলে সুপার টুয়েলভে খেরার স্বপ্নে বড় একটি ধাক্কা খেলো টাইগাররা।

Facebook Comments