“মশা তাড়ান ডেঙ্গু থেকে বাঁচুন”

সম্পাদকীয়

তাসনিম তাপসী

ছোট্ট একটা প্রাণী,চোখেও দেখা যায় না সব সময়৷শিশু আর বয়স্কদের পক্ষে প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াচ্ছে মশকবাহিত রোগের আক্রমণ৷ এই অবস্থায় আপনার বাড়িটিকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করুন সবার আগে৷ মশারি খাটিয়ে ঘুমোন৷ দিনে-রাতে বাইরে বেরনোর আগে ও বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর আগে অতি অবশ্যই রেপেলান্ট লাগাতে ভুগবেন না৷ সেই সঙ্গে কিছু ঘরোয়া টোটকা মেনে চলতে পারেন, তাতেও মশা-মাছি দূরে রাখা সম্ভব৷

ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। এছাড়া আক্রান্তরা পিঠ, দাঁত, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব করে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার আগে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ারও দরকার নেই। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে সচেতনতার কথাও বলেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।

বাড়ি ও তার আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেবেন না এ কথা সবাই জানেন যে, বাড়ি বা তার আশেপাশে জল বা আবর্জনা জমতে দেওয়া মানেই মশার বংশবৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া৷ তাই কেবল বাড়ি পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, সতর্ক দৃষ্টি রাখুন আশপাশের এলাকার প্রতিও৷ ঠিকমতো জঞ্জাল সাফ না হলে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্ক পরিষ্কার রাখুন, তা যেন ঢাকা দেওয়া থাকে৷ চৌবাচ্চা থাকলে তার উপরেও ঢাকা দিয়ে রাখুন৷ অ্যাকোয়ারিয়াম বা লিলি পুল আছে বাড়িতে? জল নিয়মিত পরিষ্কার করুন, ছেড়ে রাখুন গাপ্পির মতো মাছ যা মশার লার্ভা খেয়ে নেয়৷

বাসায় খোলা পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১০২ ডিগ্রি ও এরচেয়ে বেশি জ্বর, সঙ্গেই তীব্র মাথা ও শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ে, তীব্র পেট ব্যথা, স্কিন র্যাশ ইত্যাদির সঙ্গে বমিভাব ও ক্ষুদামন্দা থাকলে তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে এন্টিবায়োটিকসহ নানান ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর প্রশমনে কেবল প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি খেলেই চলে। তবে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে।

মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে যা যা করবেন-

নিম/ সিট্রোনেলা তেল ব্যবহার করুন-

সিট্রোনেলা তেল কিনতে পাওয়া যায় বাজারে৷ নিমের তেল ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল 1:1 অনুপাতে মিশিয়ে রাখুন হাতের কাছে৷ দরকারমতো স্প্রে করে নিন শরীরের খোলা অংশে৷ নারতেল আর নিম তেলের মিশ্রণ স্নানের পরেও ব্যবহার করতে পারেন গোটা শরীরে৷ সিট্রোনেলা তেল মেখেও স্বচ্ছন্দে বাইরে বেরোতে পারবেন, এর প্রাকৃতিক সুগন্ধ আপনাকে ঘিরে রাখবে সারা দিন৷ এই তেলে ভেজানো ব্যাজও কিনতে পাওয়া যায় আজকাল৷ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর সময় ইউনিফর্মে লাগিয়ে দিতে পারেন৷ এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়, মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করুন৷

তুলসী গাছ লাগান-

অনেকেই বিশ্বাস করে যে বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে নাকি মশা বা মাছি ঘরে ঢুকতে পারে না৷ ব্যালকনিতে বা জানলার কাছে তুলসী গাছ রেখে দেখতে পারেন৷

মশা তাড়াতে রসুন কার্যকর-

কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে থেঁতো করে নিন৷ তার পর সেটা খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিন তিন কাপ জলে৷ জল ফুটে অর্ধেক হলে নামিয়ে ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন৷ ঠান্ডা হলে ঘরের কোণে কোণে স্প্রে করে দিন এই মিশ্রণ৷

Facebook Comments