করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

দেশবাংলা ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী বলেন,করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত থাকবে। ।

বুধবার (১০ জুন) জাতীয় সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অনেক দেশ সংসদে বাজেট দিতে না পারলেও বাংলাদেশ তা দিচ্ছে বলেও তিনি এ সময় উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্ম যখন হয়েছে মরতেই হবে। তাই গুলি খেয়ে মরি, বোমা খেয়ে মরি, করোনাভাইরাসে মরি, অসুস্থ হয়ে মরি— এখন কথা বলতে বলতেও মরে যেতে পারি। মৃত্যু যখন অবধারিত, তখন মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি ভয় কখনও পাইনি, পাবো না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, জীবন আল্লাহ একদিন নিয়ে যাবেন, এটাই আমি বিশ্বাস করি।

করোনাভাইরাসের কারণে সমাজের অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের প্রশাসন যেভাবে ওটা বন্ধ হয় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, আনসার, ভিডিপি, বিজিবি, সাংবাদিক প্রত্যেকে প্রতিনিয়ত জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

করোনাভাইরাস এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছে, মানুষের মধ্যে একটা দূরত্ব নিয়ে এসেছে। তবে এটা ঠিক, সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। জানি না, সব জিনিসের ভালো-মন্দ দিক থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে মরি, গুলি খেয়ে মরি, অসুস্থ হয়ে মরি, মরতে একদিন হবেই। এই মৃত্যু যখন অবধারিত সেটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি ভয় পাইনি। কখনো ভয় পাবো না। আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি, সেটা ছিল সেই বাংলাদেশ, যেখানে আমার মা-বাবা, ভাই, বোন, শিশু ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের পরিবারের বহুজনের সদস্য বুলেটবিদ্ধ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বুলেটবিদ্ধ বা স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে কর্মহীন হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘যারা ছোটখাটো কাজ করতো, দিন আনে দিন খায়, তারা প্রত্যেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের খবর নিয়ে তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানো, এজন্য নগদ টাকার ব্যবস্থা করা, এতিমখানা-মসজিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক তাদের আমার ত্রাণ তহবিল, জাকাতের টাকাসহ নানাভাবে সহায়তা করেছি। আমরা মানুষকে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্যটা দিয়েছি। সমাজের অগোচরে থেকে যাওয়া বিশাল জনগোষ্ঠীর কষ্ট-দুঃখটা যাতে একটু লাঘব করা যায়, সেই চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছি।’

প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে এজন্য আলাদাভাবে ত্রাণ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা সাহায্য পান। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছে, যে যেটুকু পেরেছে প্রত্যেকেই সাহায্য করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও সাহায্য করেছে।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পর মরদেহ গ্রহণ বা লাশ দাফনের ক্ষেত্রে স্বজনদের অমানবিক আচরণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কেউ মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন লাশ ফেলে চলে যায়। সেই লাশটা টানে পুলিশ। তারা নিয়ে কবর দিচ্ছে, জানাজা দিচ্ছে। ভয়ে আপনজন কেউ থাকছে না। মানুষ ভীত হয়ে এরকম অমানবিক আচরণ করবে, এটাও কিন্তু দুঃখজনক। আরেকটি বিষয় আমি না বলে পারব না, যেমন আমাদের ছাত্রলীগ আমার নির্দেশে ধান কেটেছে। এমনকি এই লাশ নিয়ে এসে তাদের দাফনের ব্যবস্থা, যারা অসুস্থ তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া, সেবা-শুশ্রুষা করার কাজগুলো কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ করে যাচ্ছে।

তিনি জানান, প্রত্যেক জেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে আলাদাভাবে ফান্ড দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে যেন সহযোগিতা করা হয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যে যতটুকু পেরেছে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিত্তশালীদের সাহায্য করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সাহায্য করেছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, করোনাভাইরাসে মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন আপনজন ফেলে চলে যায়। সেই লাশ টানে পুলিশ বাহিনী। তারা নিয়ে কবর দিচ্ছে। জানাজা পড়ছে। সেখানে ভয়ে কোনও আপনজন থাকছে না। মানুষের মৃত্যুর পর এ ধরনের অমানবিক আচরণ করবে এটা খুবই দুঃখজনক।’

বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান কাটতে ছাত্রলীগ সহযোগিতা করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ছাত্রলীগ-যুবলীগ মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন ও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে আপনজনেরা লাশ ফেলে যায়, সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মানবিকতা দেখিয়েছে। এতেই আমি আশাবাদী।’

‌ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘একদিকে করোনাভাইরাস, অপরদিকে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমরা ২৪ লাখ মানুষকে শেল্টারে নিয়ে আসি। গৃহপালিত পশুপাখি আমরা শেল্টারের নেওয়ার ব্যবস্থা করি। প্রত্যেককে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিই। এসবই করা হয় করোনাভাইরাসের নিয়ম মেনে। আম্পানে হয়তো অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা জান বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি।’

নিজের শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বুদ্ধিজীবী বেঁচে ছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। আমি প্রধানমন্ত্রী হই আর যা-ই হই, শিক্ষক শিক্ষকই। তাকে আমি সবসময় শিক্ষকের মর্যাদাই দিয়ে এসেছি। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি, সবসময় খোঁজ-খবর নিয়েছি। চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু বয়স পার হয়ে গিয়েছিল। পরিচিত মানুষ আজ হারিয়ে গেছে সত্যি কষ্ট হয়। আজ কাকে রেখে কার কথা বলবো।’

Facebook Comments