করোনাকালে এলো আনন্দহীন ঈদ

তাসনিম তাপসী

এলো মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় প্রধান উৎসব ‘ঈদুল ফিতর’। রমজানের পর ঈদ আসে মুসলমানের মাঝে আনন্দ ও উৎসবের বার্তা নিয়ে। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি।এবারও রমজানের রোজার শেষে ঈদ আসছে। করোনার এই দিনে এবার এসেছে এক বিষণ্ণ ঈদ।

আজ শনিবার জাতীয় কমিটির সভা থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ ঘোষণা হলে আগামীকাল রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আজ চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হবে পরদিন সোমবার। চাঁদের নিয়মে বা পরশু হবে ঈদের দিন। কিন্তু করোনাকালে ঈদ কতটা উদযাপিত হবে, গত দুই মাস ঘরবন্দি থাকার পর কতজনের সেই সামর্থ্য অবশিষ্ট আছে, তা সম্ভবত অনুমান করাও কঠিন।

ঈদ যেন অন্য রকম অনুভূতির সাথে খুশির জোয়ার নিয়ে আসে। প্রতিবছর প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে বাসে, ট্রেনে এবং লঞ্চে। মহাসড়কে গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে থাকে। ঈদযাত্রার হাজারও পরিশ্রম আর অসহ্য ক্লান্তির পরও মানুষের মনে এক নির্মল শান্তি বিরাজ করে।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। যা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও।করোনার আতঙ্কও বিরাজমান, তাই এবারের ঈদ উৎযাপনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবার। আগে জীবন বাঁচাতে হবে। উৎসব এক দিনের হলেও এই দিনকে ঘিরে থাকে অনেক দিনের প্রস্তুতি। যাতে উৎসবমুখরিত দিনটাকে ভালোভাবে উৎযাপন করা যায়।

কোভিড-১৯ এর জন্য সবাই ঘরবন্দী তাই ঈদটাকেও ঘরবন্দী করে রাখার চিন্তাই করেছি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কারো সাথে এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হবে না! আসলে এই মহামারী অবস্থায় ঈদটা হয়তো পূর্বের ন্যায় আনন্দ নিয়ে আসেইনি! এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যতিক্রম ঈদ যা আগে কখনও এসেছিল বলে আমরা জানিনি। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের জন্য এবারের ঈদুল ফিতর হচ্ছে একটি বাজেতম অভিজ্ঞতা।

ঈদের শুরুটা হয় ঈদগাহে সবাই মিলে নামাজ পড়তে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। করোনার কারণে স্মরণকালে এই প্রথম ঈদের জামাত হবে না ঈদগাহে। গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতীয় ঈদগাহে নেই জামাতের আয়োজন। করোনার বিস্তার রোধে দেশের কোথাও এবার ঈদগাহে জামাত হবে না। মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জামাত করার পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় হবে। পরের জামাতগুলো হবে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায়। অন্যান্য মসজিদেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাত আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবছর ঈদে সরকারি ভবন, সড়ক সাজানো হয় রঙিন বাতি ও পতাকায়। বহু বছর পর এবারই প্রথম নেই কোনো সাজসজ্জা। প্রতিবছর ঈদে নতুন করে সাজে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, বিনোদন কেন্দ্র। লাখো মানুষের ভিড় হয়। এবার করোনা ঠেকাতে সব বন্ধ।

সংকটময় মুহূর্তে ঈদ একটু ভিন্নভাবে পালন করতে হবে। এখন আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি আমাদের সকলের উচিত সতর্কতা থাকা। যদিও এবারের ঈদটা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করতে পারব না। পরিবার, প্রিয়জনদের সুরক্ষার কথা ভেবেই ঈদের অনুভূতিগুলো বাড়িতে থেকেই ভাগ করে নিব। সকলকে খেয়াল রাখতে হবে আমরা খুব দুঃসময় পার করছি। সবাই সুস্থ থাকি, নিরাপদ থাকি এবং দেশকে ভালো রাখি ।

Facebook Comments