করোনায় মৃত গণমাধ্যমকর্মীদের ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি

দেশবাংলা ডেস্ক

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজের) জরুরি সভায় দেশব্যাপি করোনা দূর্যোগের সময় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন নোয়াব ও এ্যাটকোর ভুমিকায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয়।

বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে তিনজন সাংবাদিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ও আরো অন্তত ৮০ জন গণমাধ্যম কর্মী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ও ঘরে-বাইরে চিকিৎসাধীন থাকার পরেও গণমাধ্যম মালিকদের এ দুটি সংগঠন এবং সম্পাদক পরিষদের মত দায়িত্বশীল সংগঠন, দুর্দশাগ্রস্ত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগাবে বলে আশা করা হয়েছিল।কিন্তু, কার্যত তা দেখা যায়নি। এমনকি করোনায় নিহত সাংবাদিকের জন্য একটি শোক বিবৃতি/বার্তা পাঠানোর মত দায়িত্ববোধও এ সব সংগঠনের নেতাদের দেখা যায়নি।

শনিবার (৯ মে) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই যৌথ সভায় উভয় সংগঠনের নেতারা গণমাধ্যমের অগ্রগতি ও সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে বেশ কিছু প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরেন।

ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সঞ্চালনায় যৌথ সভায় করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সারাদেশের সংবাদ কর্মীদের সার্বিক অবস্থার বিবরণ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সহ সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ, যুগ্মমহাসচিব আব্দুল মজিদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ, নুরে জান্নাত আকতার সীমা, ডিইউজে সহসভাপতি এম এ কুদ্দুস, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান জিহাদ, প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুলাল খান, জনকল্যাণ সম্পাদক সোহেলী চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস সোহেল, শাহানাজ পারভীন এলিস, রাজু হামিদ, ইব্রাহিম খলিল খোকন, সলিম উল্লাহ সেলিম প্রমুখ।

সভায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করায় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন মাহমুদুল হাকিম অপু, আসলাম রহমানের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন-

সভার প্রস্তাব

১. করোনা মহামারিতে ব্যাপক হারে সংবাদ কর্মী আক্রান্ত হওয়া এবং অনেকের মৃত্যুতে সারাদেশের সংবাদ কর্মীসহ তাদের পরিবারে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

২. ইতিমধ্যে প্রথম আলো, ইত্তেফাক, সময়ের আলো, কালের কন্ঠ, আলোকিত বাংলাদেশ, ইনকিলাব, প্রতিদিনের সংবাদ, মানবজমিন, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশের খবর, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, এনটিভি, আরটিভি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, দীপ্ত টিভি, বাংলাভিশন টিভি, এসএটিভি, যমুনা টিভি, মাছরাঙা টিভি, বিটিভি, ডিভিসি নিউজ, দেশ টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সংবাদকর্মী আক্রান্ত।

৩. বেশীরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও কোন প্রতিষ্ঠানে আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে না।

৪. অপরদিকে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য গণমাধ্যম মালিকদের প্রতি বারবার আহবান জানানো স্বত্ত্বেও মালিকরা কর্নপাত করছে না।

৫. বরং এই মহামারিকে সুযোগ হিসেবে মনে করে আলোকিত বাংলাদেশ, জিটিভি, এসএটিভি, ইউএনবি, এশিয়ান টিভিসহ একাধিক গণমাধ্যমে ছাঁটাই, বেতন কর্তনসহ বিভিন্নভাবে সংবাদ কর্মীদেরা হয়রানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক সংবাদ কর্মীদের জীবিকা অনিশ্চিত করে অনলাইন ভার্সন চালু রেখে অসাধু ধান্ধাবাজির পাঁয়তারা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে আন্ডার গ্রাউন্ড অভার গ্রাউন্ড সব একাকার।

৬. বর্তমানের এই আপৎকালে সারাদেশের সংবাদ কর্মীদের আর্থিক সহায়তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। ইতিমধ্যে দেড় মাস সময় অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। মাননীয় তথ্যমন্ত্রীকে তাগিদ দেওয়া হলে তিনি কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় এই আপৎকালিন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যূত,কর্মহীন ও ন্যায্য বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত সংবাদ কর্মীদের মধ্যে চরম দুঃশ্চিন্তার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাত্যহিক জীবন যাপনসহ ঈদের সময়ে কিভাবে কি করবে এই চিন্তায় তারা দিশেহারা।

সভার সিদ্ধান্ত ও দাবি

১. করোনা মহামারির এই সময়ে প্রত্যেক গণমাধ্যম মালিককে কর্মরত সংবাদ কর্মীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. কোন সংবাদকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গণমাধ্যম মালিককে বহন করতে হবে। এবং একই সাথে করোনা আক্রান্ত সংবাদকর্মীর পরিবারের দেখভালও করতে হবে।

৩. করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোন সংবাদ কর্মী মৃত্যুবরণ করলে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রয়াত সংবাদকর্মীর পরিবারকে নগদে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা প্রদান করতে হবে।

৪. কোন গণমাধ্যম মালিক করোনা মহামারির এই সময়ে কর্মরত সংবাদ কর্মীদের সুরক্ষায় উপরোক্ত দায়িত্ব গ্রহণ ও পালনে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষতিগ্রস্ত সংবাদকর্মীর পরিবারের সদস্যরা আদালতে মামলা দায়ের করলে ইউনিয়ন তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

৫. গণমাধ্যম মালিকদেও সভার এ সব সিদ্ধান্তসমূহ জানিয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৬. ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্তের আলোকে গণমাধ্যম মালিকরা লিখিত নোটিশ জারি করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সংবাদ কর্মীদের সুরক্ষার উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের ব্যবস্থা না করলে সংবাদ কর্মীরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যতটা সম্ভব দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য কোন সংবাদ কর্মীর বেতন কর্তন, ছাঁটাই কিংবা হয়রানি করা যাবে না।

৭. সংবাদ কর্মীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. এ ব্যাপারে প্রত্যেক ইউনিয়ন তার প্রতিটি ইউনিটকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলবে। যে সব প্রতিষ্ঠানে ইউনিট নেই সেখানে ইউনিয়ন স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৯. পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই সংবাদ কর্মীদের বকেয়াসহ চলতি মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।

১০. কোন গণমাধ্যম মালিক এর ব্যত্যয় ঘটালে সরকারকে সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন ও টেলিভিশনের প্রদত্ত্ব লাইসেন্সের শর্তাবলীর আলোকে ডিক্লারেশন ও লাইসেন্স বাতিল করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১. অন্যথায় ইউনিয়ন মনে করবে, সারাদেশের মেহনতি সংবাদ কর্মীদের জীবন-জীবিকাকে চরম অনিশ্চিয়তার মুখে ঠেলে দেওয়ায় সরকার গণমাধ্যম মালিকদের বহুমাত্রিক স্বার্থ রক্ষায় সহযোগিতা করছে।

১২. সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ঈদের পর উপযুক্ত সময়ে এফইসির সভা/ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা পর্যালোচনা মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

দেশবাংলাবিডি২৪/দে

Facebook Comments