সেহরি ও ইফতারিতে যেভাবে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবেন

তামান্না চৌধুরী প্রধান পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হসপিটাল

চলছে পবিত্র মাহে রমজান। বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হচ্ছে। এবার তাই রোজা পালনে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি অবশ্যই সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সঠিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই না গতানুগতিক ট্রেডিশনাল রকমারি খাবারের মধ্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সিম্পল অর্থাৎ খুব সাধারণ খাদ্য উপাদান দিয়ে ঘরে এমন খাবার তৈরি করুন যেন একটি খাবার থেকে অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।

মনে রাখবেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার কথা বলা হয়। ভিটামিন সি, এ, ডি এবং জিংক ও সেলেনিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ইফতার আয়োজনে প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করতে হবে।

ইফতার

অনেক ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর প্রথম খাবারই হল ইফতার। তাই অবশ্যই আপনাকে নরম, সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর খাবার ইফতার মেন্যুতে রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেট হিসেবে ভাত, রুটি, নুডলস, আলুর চপ, খিচুড়ি, চিড়া, সাগু, মুড়ি ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। প্রোটিন হিসেবে দুধ, দই, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা ডাল দিয়ে তৈরি খাবার রাখা যেতে পারে। ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য ফল, ফলের জুস, শুকনো ফল বা খেজুর, সবজি ও শাক দিয়ে তৈরি খাবার রাখা যেতে পারে। তরল পানীয় হিসেবে গুড়ের শরবত, ঘরের তৈরি চিনি ছাড়া ফলের জুস, ডাবের পানি, ইসবগুল বা তোকমার শরবত, রুহ আফজা, লেবু পানি ও দইয়ের লাচ্ছি রাখা যেতে পারে।

তবে মনে রাখবেন, অনেক কিছু এক সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। মেন্যু সিলেকশন সঠিকভাবে করতে হবে, যেন তা থেকে সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। যেমন: এক গ্লাস শরবত, দুইটা খেজুর, ডাল-চাল ও সবজির তৈরি খিচুড়ি এবং ফলের সালাদ। এটি একটি হেলদি (স্বাস্থ্যকর) ইফতার মেন্যু। এমনভাবে ইফতার মেন্যু তৈরি করতে হবে- যা মিল হিসেবে কাজ করে। ইফতারে অবশ্যই ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি চাইলে ইফতারে এক প্রকার শরবত ও খেজুরের সঙ্গে ভাত, সবজি ও মাছ বা মাংস খাওয়া যেতে পারে। এটা সহজে হজমযোগ্য ও পুষ্টিকর মেন্যু।

রাতের খাবার

আমাদের তিন বেলা খাবার থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হয়। তার মধ্যে রাতের খাবার একটা। রোজার সময় তারাবি নামাজের পর সাধারণত রাতের খাবার খাওয়া হয়। রাতের খাবারের মেন্যু হালকা হওয়া উচিত। তাতে সঠিক পরিমাণের খাবার সেহরিতে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া রাতে একটু হালকা খাবার খেলে ঘুম ভালো হয় এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। রাতে দুধ-রুটি-ফল, রুটি-সবজি-ডিম, রুটি-ডাল-সবজি, চিড়া- দুধ, ওটস-দুধ, সাগু-দুধ অথবা সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে যারা এসব কিছু খেতে পারেন না বা হালকা ইফতার করেন, তারা চাইলে ভাত, সবজি ও মাছ অথবা মাংস খেতে পারেন।

সেহরি

এই খাবারটি রোজায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিমাণের সেহরি আপনাকে এনার্জিটিকভাবে রোজা পালনে সাহায্য করবে। সাধারণ সময়ে দুপুরের খাবার আসলে সেহেরিতে খেলে ভালো। এই সময় নরম সহজ পাচ্য ভাত, সঙ্গে নরম সুসিদ্ধ সবজি ও মাছ সবচেয়ে উত্তম খাবার। তবে যারা মাছ খেতে পারেন না তারা মাছের পরিবর্তে মুরগির মাংস বা ডিম খেতে পারবেন। সেহরিতে ডাল বা ডাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চললে ভালো। অনেকে আবার সেহরির সময় তরকারি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, তারা চাইলে দুধ ভাত আর কলা বা খেজুর খেতে পারেন। অনেকে সেহরির সময় পাউরুটি খায়, যা আসলে স্বাস্থ্যকর নয়। এই সময় বেকারির কোনো খাবার গ্রহণ করা ঠিক না।

ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

বর্তমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক পরিমাণের পুষ্টি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই সময় প্রসেস খাবার, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার, সাদা চিনি, ভাজা পোড়া খাবার, কোল্ড ড্রিংক, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।

Facebook Comments