ফরিদপুরে দুই ইউনিয়ন লকডাউন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ফরিদপুরে জনসমাগম এড়াতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাপ্তাহিক হাট-বাজার, আবাসিক হোটেল, শপিংমল, বাণিজ্য কেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, মেলা, সামাজিক ও ধর্মীয় সব অনুষ্ঠান, ফাস্ট ফুড, স্ট্রিট ফুড, চায়ের দোকানে আড্ডাসহ জনসমাগম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
জনসাধারণের কেনাকাটার সুবিধার্থে জেলা-উপজেলার খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধের দোকান, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে খোলা থাকবে। যেসব প্রবাসী বিদেশ থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না তাদের বিষয়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ফরিদপুর জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে এ পর্যন্ত ১০৪৮ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। পাশাপাশি ২১৮ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে জেলায় এনজিওগুলোর যৌথসভায় জনস্বার্থে ২৪ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলার সব এনজিওর কিস্তি আদায় স্থগিত করা হয়েছে।
বেসরকারি সংগঠন বিএফএফর নির্বাহী পরিচালক আ ন ম ফজলুল হাদী সাব্বির বলেন, করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এনজিওগুলোর যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২৪ মার্চ থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলার সব এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ও চর নাছিরপুর ইউনিয়ন লকডাউন করা হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। শিবচর উপজেলাসংলগ্ন এলাকা হওয়ায় ওই দুটি ইউনিয়ন লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে ফরিদপুর জেলায় বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। শহরের বিভিন্ন বাড়ির মূল ফটকে স্টিকার টাঙিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।
জেলাবাসীকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা করা হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দ্রব্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে জনসমাবেশ করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সচেতনতায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, জেলায় ব্যাপকসংখ্যক লোক প্রবাস থেকে এসেছেন। প্রতিনিয়ত হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছি। পাশাপাশি আইসিইউ তৈরি হয়েছে। সালথা উপজেলায় নবনির্মিত হেলথ কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটিকে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে করোনা প্রতিরোধের বিষয়ে যা যা সম্ভব তার প্রায় সবগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ চলমান।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ফরিদপুর শহরের দুটি যৌনপল্লীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। মানবিক কারণে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ঘর ভাড়া না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাড়িওয়ালাদের। নিম্নআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে সব এনজিওর কিস্তি আদায় স্থগিত করা হয়েছে।

Facebook Comments