আমার কথাবার্তা ব্যবসায়ীর মতো, মন্ত্রীর মতো ভাব-টাব আসে না: বাণিজ্যমন্ত্রী

ব্যবসা বাণিজ্যের অগ্রগতি না ভেবে শুধু রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তা করলে আগামীতে বিষয়টা সুখকর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এজন্য তিনি যেমন এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পক্ষে মত দিয়েছেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাংকগুলোর সুদের হার এক অংকে নামাতে বলেছেন। মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। এ সময় তার কথাবার্তা ব্যবসায়ীদের পক্ষে যাচ্ছে এ কথা স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমিও একজন ব্যবসায়ী। তার জন্য আমার কথাবার্তা ব্যবসায়ীদের মতো। মন্ত্রীর মতো ভাব-টাব এখনও আসে না।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী সিরামিক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন।
টিপু মুনশি বলেন, রাজস্ব কালেকশনে আমাদের সঙ্গেও এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বসা দরকার। ট্যারিফ কমিশন বলে কিছু আছে সেটা ভাবাই হয় না। ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এনবিআরকে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন,এনবিআর যে পদ্ধতিতে রাজস্ব সংগ্রহ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ পদ্ধতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে আয়কর দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু কয়জন দেয়? এই পরিধিটা যদি বড় না করা হয়, তাহলে যারা দেয় তাদের ওপরই চাপ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে যারা দেয় তাদের তো নাভিশ্বাস উঠে যাবে।
তারপরও ব্যবসায়ীদের স্যালুট জানাই এসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা দেশের বাণিজ্যকে বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আমি আগামীতে এনবিআরের সঙ্গে বসবো। এ ব্যাপারে কথা বলবো। ট্যারিফ কমিশন হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান। এনবিআরকে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বসে ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে বলবো।
টিপু মুনশি বলেন, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না। এত সুদ হলে একটার পর একটা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়বে। এটা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণে সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন। এ জন্য ব্যাংকারদের নানা সুবিধা দেওয়া হলো। ব্যাংকাররা সুবিধাটা পুরোপুরি নিলো। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সুদহার এক অংকে আনলো না।
তিনি আরও বলেন,সুদের হার কমার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীও অনেকবার তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও প্রাইভেট ব্যাংক সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনেনি। তারা সুবিধা নিলো, প্রধানমন্ত্রী বারবার বললেন, তারপরও কাজের কাজের কিছুই হলো না।
তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দেশই পৃথিবীর ব্যতিক্রমী দেশ, যেখানে স্প্রেড অনেক হাই। অন্যান্য দেশে যেখানে স্প্রেড আড়াই থেকে তিন শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে এটা ৬ শতাংশের ওপরে। এট হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন,এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের অর্থনীতির কী হবে, ব্যবসায়ীরা যাবে কোথায়? এ ধরনের কথা বললে মনে হবে যে মন্ত্রী বলছে না, ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোনও ব্যবসায়ী বলছে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, আমিও একজন ব্যবসায়ী। তার জন্য আমার কথাবার্তা ব্যবসায়ীদের মতো। মন্ত্রীর মতো ভাব-টাব এখনও আসে না।
আমি অর্থমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকি, আর অর্থমন্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুদহার এক অংকে নামিয়ে না আনলে কোনও ব্যবসা করা যাবে না। অন্তত জেনুইন ব্যবসা করা যাবে না। অন্য কিছু করা গেলে যাবে।

Facebook Comments