ডায়াবেটিস এর কারণ বেশি ভাত খাওয়া

দেশবাংলা ডেস্ক :

বেশি ভাত খাওয়ার প্রতিদিনই প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পরও ভাত খাওয়ার পরিমাণ না কমালে ও কায়িক পরিশ্রম না করলে লিভারসহ অন্যান্য জটিল রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
সাইফউদ্দিন বলেন, উন্নত বিশ্বে খাবার টেবিলে ভাতের বোল থাকে ছোট আর তরকারির বোল থাকে বড়। আমাদের দেশে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। তিন বেলা পেট ভরে ভাত না খেলে যেন খাওয়াই সম্পূর্ণ হয় না। দাম অপেক্ষাকৃত সস্তা হওয়ায় খাবার টেবিলে সবচেয়ে বেশি থাকে ভাত।
তিনি বলেন, দেশের অনেক মানুষের প্রিয় খাবার ভাত ও আলুর ভর্তা। এ দুটি খাবারেই কার্বোহাইড্রেট বেশি, যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে খাবারে ভাতের পরিমাণ কমানো, সম্ভব হলে ভাত খাওয়া ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কার্বহাইড্রেটে কেন বিপদ বাড়ে?
পৃথিবীব্যাপী মানুষের খাদ্যতালিকার বড় অংশ কার্বহাইড্রেট। এ খাবার থেকে শরীর শক্তি পায়। স্টার্চ ও প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টিস্বাদযুক্ত খাবারে কার্বহাইড্রেট থাকে। যেমন—চাল, গম, সবজি, ফল, দুধ ও মিষ্টি।পরিপাকতন্ত্রে এই কার্বহাইড্রেট ভেঙে চিনিতে রূপান্তরিত হয়। এই চিনি পরিপাকতন্ত্রের গাত্রে শোষিত হয়ে রক্তে আসে। তখন অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনের সহায়তায় চিনি কণিকা কোষে প্রবেশ করে। যখনই কোষে এই চিনি চলে যায় তখন তা ভেঙে শক্তি উত্পন্ন হয়। কিন্তু ডায়াবেটিসে ইনসুলিন হরমোন উত্পন্ন হয় না বা অপর্যাপ্ত হারে উত্পন্ন হয় বলে চিনি রক্ত থেকে কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় বাড়তে থাকে। এ কারণেই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য কার্বহাইড্রেটের হিসাব জানা জরুরি। রক্তে চিনির মাত্রা আদর্শ রাখতে প্রতি বেলা খাবারে তাই ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম কার্বহাইড্রেটই যথেষ্ট। এটা বয়স, লিঙ্গ, ওজন, রক্তে চিনির গড় মাত্রা ইত্যাদির ওপরও কিছুটা নির্ভরশীল।
আমরা যে ধরনের কার্বহাইড্রেট খাই তাতে তিন ধরনের খাদ্য থাকে। স্টার্চ, চিনি, আঁশ। কার্বহাইড্রেটের মধ্যে স্টার্চ একটু যৌগিক গঠনের। চাল, আটা, আলু, ভুট্টা, শিম ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ফাইবার বা আঁশ পাওয়া যায় শাকসবজি, ফল, ঢেঁকিছাঁটা চাল, লাল আটা, বাদাম ইত্যাদিতে। আঁশ থাকায় এসব খাদ্য হজম হতে বেশি সময় নেয় বলে রক্তে চিনির মাত্রা কম থাকে। তাই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য এ ধরনের আঁশযুক্ত খাবার উপকারী বিবেচনা করা হয়। প্রতি বেলা ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার তাই ডায়াবেটিক রোগীর গ্রহণ করা উচিত। আর চিনির মতো সরল কার্বহাইড্রেট সহজেই হজম হয় এবং সরাসরি রক্তে মিশে যেতে পারে। এমনকি প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে চিনি থাকে সেই চিনিও সরাসরি রক্তে মিশতে পারে। যেমন—মিষ্টিস্বাদযুক্ত ফল, দুধ। এর বাইরে বেকারির বিস্কুট, ক্যানজাত খাবার, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় সব খাবারে অতি উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে।
স্টার্চ নয়, কিন্তু কার্বহাইড্রেট আছে এমন খাবার সম্পর্কেও ডায়াবেটিক রোগীর ধারণা থাকা উচিত। যেমন—লেটুস, শসা, মাশরুম, পেঁপে। তবে এগুলোতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই কার্বহাইড্রেট থাকে অনেক কম। যেমন একটি শসায় দুই গ্রামের মতো কার্বহাইড্রেট থাকে। এ ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেতে সাধারণত ডায়াবেটিক রোগীর কোনো বাধা নেই।
ভাত, আটা, সিরিয়াল বা স্টার্চযুক্ত খাবার কোনোটাই বাদ দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু কমিয়ে আনার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে ভাত। এটি খুবই উচ্চমাত্রার কার্বহাইড্রেট। তবে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পরিমাণমতো খেলে পেটও ভরবে, চিনিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সাধারণত এক কাপ পরিমাণ ভাতে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম কার্বহাইড্রেট থাকে, যা প্রতি বেলা কার্বহাইড্রেটের মাত্রার চার ভাগের এক ভাগের মতো। তাই ভাত নিয়ে বেশি বাছ-বিচারের চেয়ে অন্য খাবার থেকে যেন শরীরে চিনি বা কার্বহাইড্রেট কম আসে সেটার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আবার চালেরও কিছু প্রকার আছে। এমন কিছু চাল আছে যার ভাত পরিমাণে বেশি খেলেও রক্তে সহজে চিনির মাত্রা বাড়ে না। এ ধরনের চালকে বলা হয় লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা লো জিআই রাইস। বাংলাদেশের বাজারেও এটি পাওয়া যায়। দেখতে সাধারণ চালের মতোই, তবে একটু আকারে বড়।
সাদা চাল বা মেশিনে ভাঙানো চালে আঁশ থাকে না বলে এগুলো হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা হাই জিআই রাইস। এতে সহজেই রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ে। অন্যদিকে সাধারণ চাল কিন্তু ঢেঁকিছাঁটা বা যাতে আঁশ আছে তা সহজে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। তাই যারা ভাত খেতে বেশি পছন্দ করে কিন্তু ডায়াবেটিসেও ভুগছে, তাদের উচিত লাল চাল বা ঢেঁকিছাঁটা চালের বা লো জিআই চালের ভাত খাওয়া। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে বেশি ভাত খেতে পারবে। আবার লো জিআই চালের ভাত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও অনেক কম থাকে। তাই ডায়াবেটিসের কারণে হার্টের অসুখ হওয়ার যে ঝুঁকি থাকে তা-ও কমে আসে।আবার ভাতের সঙ্গে অন্য কিছু খাবার মিশিয়ে খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। যেমন—শিমবীজ, ডাল, সবজি খিচুড়ি।

Facebook Comments