নারীদের হজ-সফরের বিধান

নারীরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপরও হজ ফরজ। তবে শর্ত হলো, তিনি একাকী হজে যেতে পারবেন না। তাকে স্বামী বা যেকোনো মাহরামের সঙ্গে যেতে হবে। স্বামী বা মাহরাম সামর্থ্যবান না হলে তার হজের খরচ ওই নারীকেই বহন করতে হবে।
নারীদের হজ ও ওমরাহ করার নিয়ম মোটামুটি পুরুষের মতোই। পার্থক্য এতটুকু যে নারীরা সেলাইকৃত যেকোনো রঙের স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তবে শাড়ি না পরে সালোয়ার-কামিজ পরা ভালো। মাথা ঢেকে রাখবে। চেহারা এমনভাবে ঢাকবে যেন তাতে কাপড় না লাগে। হাতমোজা, পামোজা ও নিজের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুতা পরতে পারবে। তালবিয়া আস্তে আস্তে পড়বে, যেন পরপুরুষের কানে আওয়াজ না পৌঁছে। তাওয়াফের সময় রমল ও সাঈর সময় সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থান দৌড়ে অতিক্রম করতে পারবে না। (ফাতাওয়া শামি : ২/৪৮৮, ৫২৮)
পর্দার জন্য বোরকার নেকাব এভাবে ঝুলিয়ে দেবে, যেন চেহারায় কাপড় না লাগে। এ জন্য মাথায় ক্যাপ পরে তার ওপর নেকাব ঝুলিয়ে রাখা যায়। এতে নেকাব চেহারা থেকে পৃথক থাকে। আর মাঝেমধ্যে লাগলে অসুবিধা হবে না, বরং পর্দার স্বার্থে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে নিতে হবে এবং পরপুরুষ সরে গেলে চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে হবে। তবে এক ঘণ্টার বেশি কিন্তু ১২ ঘণ্টার কম সময় লাগাতার চেহারার সঙ্গে কাপড় লেগে থাকলে পৌনে দুই কেজি গম বা তার মূল্য সদকা দিতে হবে। ১২ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে থাকলে একটি দম (ছাগল বা দুম্বা জবাই করা) ওয়াজিব হবে। (মুয়াল্লিম, পৃ. ২৩৭)
হজের দিনগুলোতে নারীদের নামাজ না পড়তে পারার ওজর থাকলে মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার কাজগুলো নিয়ম মোতাবেক করে যাবে। শুধু তাওয়াফে জিয়ারত স্থগিত রাখবে। পবিত্র হওয়ার পর তা করে নেবে। হজের কোরবানির পর নারীদের জন্য পূর্ণ মাথার চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটা ওয়াজিব। তবে ছোট মেয়ে হলে তার চুল কামানো যাবে। চুল নিজ হাতে বা অন্য কোনো নারী অথবা সঙ্গে থাকা মাহরাম ব্যক্তির মাধ্যমে কাটাবে। মাহরাম ছাড়া কোনো বেগানা পুরুষকে দিয়ে কাটানো যাবে না। (ফাতাওয়া শামি : ২/৫১৬)
কোনো নারী যদি পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজের জামাতে শরিক হয়, তাহলে কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের নামাজ, কোনো ক্ষেত্রে নারীর নামাজ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয়ের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এক নারীর কারণে তার দুই পাশের দুই ব্যক্তি ও বরাবর পেছনের ব্যক্তির নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, কখনো মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নারীদের নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা না পেলে, পুরুষের পাশে না দাঁড়িয়ে এক পাশে বসে থাকবে। এতে কারো নামাজ নষ্ট হবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৭৪-৫৭৬)
নারীদেরও রাসুল (সা.)-এর রওজা মুবারকে সালাম পেশ করতে যাওয়া মুস্তাহাব। নারীদের জন্য নির্ধারিত সময় জেনে নিয়ে নির্ধারিত গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে পূর্ব দিকের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করবে। ওজর অবস্থায় থাকলে সালামের জন্য মসজিদে যাবে না। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ৪/১৩৬২)
যে নারীর ওপর হজ ফরজ হয়েছে, তিনি যদি সারা জীবন তার হজের সফরসঙ্গী হিসেবে কোনো মাহরাম না পান, তাহলে বদলি হজের অসিয়ত করবেন। তার মৃত্যুর পর তার অর্থে বদলি হজ করাতে হবে।

Facebook Comments