দিল্লিতে পানির জন্য মানুষের হাহাকার

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে দুই কোটি মানুষের বাস। রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী, করপোরেট লবিস্টরা বাস করেন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে। গোসলখানা,রান্নাঘর কিংবা গাড়ি ধোয়া, বাগান পরিচর্চা ও করানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি তারা। এর জন্য তাদের গুনতে হয় মাসে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মার্কিন ডলার।শহরের মধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের বেলায় এই চিত্রটি সম্পূর্ন উল্টো। বিশেষ ব্যক্তিদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি অর্থ দিয়েও পানির জন্য হাহাকার -করতে হয় তাদের। পাইপ লাইন নয় বরং তাদেরকে ট্যাংকার থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় দীর্ঘ লাইন ধরে।
ভারতে পানির সংকট প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। তবে দিল্লি কিংবা দেশের অধিংকাশ স্থানের বিশেষ বা এলিট শ্রেণির মানুষদের পানি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। পানি সংকটের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে , চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পানি সংরক্ষণের বড় ধরণের প্রকল্পের আহ্বান জানিয়েছেন।
পানির মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির সঙ্গম ভিহার জেলার ৩০ জনেরও বেশি বাসিন্দা।
৪৬ বছরের দিলিপ কুমার নাথ বলেন, ‘গত বছর পর্যন্ত আমি স্থানীয় কয়েকটি সরবরাহকারীর কাছ থেকে পানি কিনে পান করতাম। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর চিকিৎসক আমাকে বড় ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বোতলজাত পানি পান করার পরামর্শ দেন।
দিল্লির সরকারি কর্মকর্তাদের অধ্যুষিত এলাকা ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রতিদিন জনপ্রতি ৩৭৫ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। অথচ সঙ্গম বিহার জেলার বাসিন্দারা জনপ্রতি পান মাত্র ৪০ লিটার পানি। তবে এর মধ্যেও আছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের উৎপাত। এরা কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারি সংস্থার কাছ থেকে পানি চুরি করে অথবা অবৈধ পাম্প স্থাপন করে বেশি মূল্যে পানি সরবরাহ করে। বিশেষ করে তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় এবং পানির চাহিদা বাড়তে থাকে এদের দৌরাত্মও তখন বাড়তে থাকে।এর ফলে সরকারি ট্যাংকার যখন পানি সরবরাহ করতে আসে তখন সংগ্রহকারীদের মধ্যে লড়াই পর্যন্ত বেধে যায়। আর এই সহিংসতার বেশি শিকার হয় পানি নিতে আসা নারী ও শিশুরা। গত বছর দিল্লিতে পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে লড়াই করে অন্তত তিন জন নিহত হয়।

Facebook Comments