টাইগারদের স্বপ্নভঙ্গ

Bangladesh's Shakib Al Hasan (L) walks past Indian fielders back to the pavilion after his dismissal during the 2019 Cricket World Cup group stage match between Bangladesh and India at Edgbaston in Birmingham, central England, on July 2, 2019. (Photo by Dibyangshu Sarkar / AFP) / RESTRICTED TO EDITORIAL USE (Photo credit should read DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images)

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথ ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু কোহলিদের বিপক্ষে ৩১৫ রান তাড়া করে জিততে পারেনি টাইগাররা। ২৮ রানে হেরেছে মাশরাফির দল। ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ২৮৬ রান। এতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস বিশ্বকাপে সেমির স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। আগামী ৫ জুলাই বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
এবারের বিশ্বকাপটা সাকিবময় হয়ে থাকছে। আসরের বাংলাদেশ অধ্যায়ে কেবলই সাকিবের বীরত্বগাঁথা। এই অলরাউন্ডারের দুটি বিশ্বস্ত হাতের ওপর ভর করে সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তবে স্বপ্ন দেখলেই তো হবে না, তা পূরণও করতে হবে। সাকিব ছাড়া যে আর বাকিরা বাজেভাবেই ব্যর্থ। ভারতের বিপক্ষে একাই লড়েছেন সাকিব। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো ছিলেন না কেউই। শেষদিকে সাব্বির-সাইফউদ্দিনের ব্যাটে আশা দেখলেও জয়ের বন্দরে পৌছাতে পারেনি টাইগাররা।
এজবাস্টনে আজ টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে বোলিং উদ্বোধন করেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দুজনের শুরুটা দারুণ হয়েছিল। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ৬ষ্ঠ ওভারে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৯ রানে বিধ্বংসী ওপেনার রোহিত শর্মার দেওয়া সহজ একটা ক্যাচ হাতছাড়া করেন তামিম ইকবাল! সেই ৯ রান থেকেই বিশ্বকাপের পঞ্চম সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। জীবন পাওয়ার পর রোহিত হয়েছেন আরো আগ্রাসী। টাইগারদের বিপক্ষে ৯০ বলেই শতরানের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ভারতের এই ওপেনার।
রোহিত-রাহুল মিলে গড়ে তুলেন ১৮০ রানের জুটি। বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ৩০তম ওভারে রোহিত শর্মাকে আউট করেন সৌম্য সরকার। সৌম্যের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটন দাসের তালুবন্দী হন রোহিত (১০৪)।
রোহিত শর্মার বিদায়ের পর স্কোর বোর্ডে ১৫ রান যোগ হতেই আরেক ভারতীয় ওপেনার লোকেশ রাহুলকে বিদায় করেছেন রুবেল হোসেন। রুবেলের করা ইনিংসের ৩২তম ওভারের চতুর্থ বলটি রাহুলের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্ল্যাভসে জমা হয়। চলতি বিশ্বকাপে রুবেলের এটি প্রথম উইকেট।
দলীয় ২৩৭ রানের মাথায় বিদায় নেন দলপতি বিরাট কোহলি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে মিড উইকেটে রুবেলের হাতে ধরা পড়েন আগের পাঁচ ইনিংসে টানা ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলা কোহলি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৭ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে কোহলি করেন ২৬ রান। এক বল পরেই বিদায় নেন হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ফিজ।
এরপর ভারতের ইনিংস লম্বা করতে থাকেন রিশব পান্ত এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। দলীয় ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে সাকিব ফিরিয়ে দেন রিশবকে। ৪১ বলে ছয়টি চার আর একটি ছক্কায় ৪৮ রান করে মোসাদ্দেকের তালুবন্দি হন রিশব পান্ত। সাকিব নিজের শেষ ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেট পান।
ইনিংসের ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন দীনেশ কার্তিককে। ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিজের অফকাটারে কাটা পড়েন কার্তিক, ক্যাচ তুলে দেন মোসাদ্দেকের হাতে। দলীয় ২৯৮ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় ভারত। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ তুলে নেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সাকিবের হাতে ধরা পড়ার আগে ধোনি ৩৩ বলে চারটি বাউন্ডারিতে করেন ৩৫ রান। শেষ ওভারে রানআউট হন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ বলে মোস্তাফিজ বোল্ড করেন বুমরাহকে। এতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ ৩১৪ রান।সাকিব ১০ ওভারে ৪১ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। মোসাদ্দেক হোসেন ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। সৌম্য সরকার ৬ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট। রুবেল হোসেন ৮ ওভারে ৪৮ রানে নেন একটি উইকেট। মাশরাফি ৫ ওভারে ৩৬ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি। সাইফউদ্দিন ৭ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৫৯ রানে তুলে নেন পাঁচটি উইকেট।৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধানী জুটিতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৩৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তামিম ইকবাল। তবে ১০ ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে ইনসাইডেজ বোল্ড হলে নিজের ইনিংস আর বড় করতে পারেননি তামিম। ৩১ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ২২ রান করেন এই বাঁহাতি।

তামিম ইকবালের সঙ্গে ভালো জুটি গড়ার পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও ৩৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সৌম্য সরকার। উইকেটে থিতু হওয়া এই ওপেনার অবশ্য ১৬তম ওভারে নিজেকে আর টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। দলীয় ৭৪ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ৩৮ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য।
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান তোলেন মুশফিকুর রহিম। তবে ভালো খেলতে থাকা মুশফিক নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২৪ রানে যুজভেন্দ্র চাহালের বলে মোহাম্মদ শামির কাছে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।

৫৮ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করেছেন সাকিব আল হাসান। এবারের বিশ্বকাপে সাকিব চতুর্থবারের মতো হাফ সেঞ্চুরি করলেন। এই বিশ্বকাপে দুইটি সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। সাকিব হাফ সেঞ্চুরি করার পরপরই আউট হয়েছেন লিটন দাস। দলীয় ১৬২ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট বল ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। চতুর্থ বলেই পান্ডিয়াকে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন লিটন। এক বল পর শর্ট বলে টাইমিং করতে পারেননি তরুণ এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ মুঠোয় নেন দিনেশ কার্তিক। ভাঙে ৪১ রানের জুটি। ২৪ বলে এক ছক্কায় ২২ রান করেন লিটন।লিটনের পর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোসাদ্দেকও। দলীয় ১৭৩ রানে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে বোল্ড হওয়ার আগে মোসাদ্দেক হোসেন করেন মাত্র ৩ রান।
চলতি বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে ছয়টিতেই ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলেন সাকিব। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে দীনেশ কার্তিকের হাতে ধরা পড়ার আগে সাকিব করেন ৬৬ রান। আর ৩টি রান করতে পারলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আবারো শীর্ষে উঠতেন সাকিব। তার ৭৪ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি।
সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখাচ্ছিল সাব্বির-সাইফউদ্দিন জুটি। দুজনের ব্যাটে ৬৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দলীয় ২৪৫ রানে বুমরাহের স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ফেরেন সাব্বির। ৩৬ বলে ৫ চারে ৩৬ রান তুলেছেন তিনি।দলীয় ২৫৭ রানে ভুবনেশ্বর কুমারকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট হয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৫ বলে একটি ছক্কায় বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ৮ রান। এরপর রুবেল-সাইফউদ্দিনে আশা দেখছিল বাংলাদেশ। ৪৮তম ওভারে বুমরাহের বলে বাউন্ডারি হাকিয়েই ৩৭ বলে অর্ধশতক তুললেন সাইফউদ্দিন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তারপরেও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারলোনা সাইফউদ্দিন। ৪৮তম ওভারে বুমরাহের শেষ দুই বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন রুবেল ও মোস্তাফিজ। এতে ১২ বল বাকি থাকতেই ২৮ রানে হারের মুখ দেখলো মাশরাফি। ভারতের কাছে এই হেরে শেষ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ।

Facebook Comments