রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় জাপানের সহযোগিতার আশ্বাস

রোববার বিকেল ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ১১ দিনের সফর শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। বিদেশ সফর শেষ করে দেশে ফিরেই প্রতিবারই এমন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার সফর থেকে ফিরে পরদিনই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক শেখ হাসিনার ফিনল্যান্ড সফরে দেশের ওপর হুমকি নিয়ে করা এক মন্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চান। জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।হুমকি সবসময় আসে, সব জানিয়ে মানুষকে ভীত করতে চাই নাবাংলাদেশের ওপর সবসময়ই নিরাপত্তাজনিত হুমকি থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় এবারের ঈদ উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। ঈদের সময় দেশে না থাকলেও প্রতিমুহূর্তের খবর তার কাছে পৌঁছত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুমকি সবসময় আসে,অনেক হুমকি। সব বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে সব তথ্য আছে। তারা সে অনুযায়ী তৎপর। ঈদের দেশের বাইরে ছিলাম। তবু সব তথ্যই আমার কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু আমরা প্রস্তুত। আমি সত্যিই বলব, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। যে জন্য সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত শেষ হয়েছে। প্রতিটি জামাত শেষ হওয়ার পর মেসেজ গেছে। শোলাকিয়ায় এর আগে ঘটনা ঘটেছে। এবার কোথাও কিছু হয়নি। আমাদের বড় শক্তি, আমাদের জনগণ খুব সচেতন। তাদের কাছে আবেদন, তারা যেন সজাগ থাকেন, সতর্ক থাকেন।এ ধরনের ঘটনা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ৮ শতাংশ জিডিপি। এটা ধরে রাখতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের কাছেও সেই সহযোগিতা চাই। কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানান।
জাপান সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমাদের ভালো হোটেল ছিল না, সোনারগাঁও হোটেল জাপান সরকার তৈরি করে দিয়েছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ। এবার সফরে নতুন সম্রাট ও আগের সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আগ্রহ তাদের। কোন কোন বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা আছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমরা চলব। এটা প্রতিটি দেশই জানে, সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যাই, বলি, আমাদের সবার কমন এনিমি আছে, দারিদ্র্য। আসুন, আমরা সাধারণ মানুষের উন্নতিটা করি। সেখানে যত খরচ লাগে, ব্যয় করি। দারিদ্র্যই আমাদের সবার বড় শত্রু এর বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াই করতে হবে, সেটাই সবসময় বলি। হলি আর্টিজানে জাপানি অনেক মানুষ মারা যান। এটা দুঃখজনক। আমরা তখন থেকেই চেষ্টা করছি, যেন আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
গত ২৮ মে জাপান দিয়ে ত্রিদেশীয় এই সফর শুরু করেন শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড যান তিনি। সফরে তৃতীয় ও শেষ দেশ ফিনল্যান্ড থেকে ৮ জুন সকালে দেশে পৌঁছান তিনি।
ত্রিদেশীয় এই সফরের শুরুতেই জাপানের টোকিওতে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে আড়াইশ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয় তার সফরে।
জাপান সফর শেষে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ মে শেখ হাসিনা সৌদি আরবে যান। সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর পবিত্র ওমরাহ পালন করেন তিনি, জিয়ারত করেন মহানবীর (স.)-এর রওজা।
সৌদি আরব থেকে গত ৩ জুন ফিনল্যান্ড যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ৪ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরদিন ৫ জুন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ও ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ তার সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন,২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার পথে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাশে থাকবে জাপান।জাপান সফর শেষে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে প্লেনে করে যাওয়ার সময় পাইলট যখন জানালেন, আমরা চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, তখন মনে হলো, নিজের দেশে নেমেই যাই, পরের দিন যাই (সৌদি আরবে)।প্লেনে চড়ে জাপান থেকে সৌদি আরব যাওয়ার সময় বাংলাদেশের আকাশসীমায় আসার পর মাতৃভূমির প্রতি টান অনুভবের কথা এভাবেই বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমে জাপান সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান সফরে কিছু চুক্তি সই করেছি। কয়েকটি প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করছে। ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে।ঢাকার হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানানোর বিষয়টিও উল্লেখ করেন
জাপান সফর শেষে সৌদি সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান থেকে সৌদি আরব যাই। যাওয়ার সময় পাইলট যখন জানালেন, আমরা চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, তখন মনে হলো, কোথায় যাচ্ছি? নিজের দেশে নেমেই যাই, পরের দিন যাই (সৌদি আরবে)।
তিনি এসময় বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটাকে আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ চলছে। এখানে জ্বালানি নেবে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো। শুধু জ্বালানিই নেবে না, সুযোগ পেলে ঘুরবেও। যদি আমরা সেভাবে সি-বিচটাকে দেখাতে পারি। কিছু কিছু এলাকা বিদেশি পর্যটকদের জন্য ডেডিকেটেড (তাদের উপযোগী) করে দেবো। এটা করতে পারলে আমরা পর্যটনে আরও এগিয়ে যাবো।
ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আইসিটিতে তারা খুবই এক্সপার্ট। এখাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এরপর মক্কায় ওমরাহ পালন এবং মদিনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা জিয়ারতের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments