সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অতিরিক্ত আইজিপির মরদেহ ঢাকায়

কঙ্গোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রৌশন আরা বেগমের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে তার মরদেহ বহনকারী বিমানটি।
নিহত রৌশন আরার স্বামী শফিকুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, নিহতের প্রথম জানাজা নয়াটোলা জামে মসজিদে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জানাজা সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মগবাজার মরহুমার পৈতৃক বাড়ির মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। সেখানে বাদ জোহর তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।এর আগে গত রোববার ডি আর কঙ্গোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কিনাশা এলাকায় দুর্ঘটনায় মারা যান রৌশন আরা।
বাংলাদেশ পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একটি লরি রৌশন আরার গাড়িকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তবে, কমান্ডার ফারজানাসহ ওই গাড়িতে থাকা অন্যরা নিরাপদে রয়েছেন।
রৌশন আরা ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের দ্বিতীয় নারী হিসেবে অতিরিক্ত মহাপরির্দশক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কসোভো এবং সুদানে কৃতিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন রৌশন আরা এবং কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি প্রতিটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে জাতিসংঘ পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশে পুলিশে তিনি তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দুই বার আইজিপি ব্যাচ এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশে তিনি প্রথম নারী পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে একটি জেলার দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় নারী।
বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন রৌশন আরা বেগম। মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় শিক্ষাণবিশ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একই পদে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন।
রৌশন আরা ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। রৌশন আরা বেগম দ্বিতীয় নারী, যিনি এ পদে আসীন হয়েছেন।
এর আগে প্রথম নারী হিসেবে এ পদে ছিলেন ফাতেমা বেগম। এই পুলিশ কর্মকর্তা দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ, ব্রামশিল থেকে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং কোর্স এবং লিডারশিপ কোর্স ফর ফিমেললিডার’স ইন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
পুলিশ বাহিনীতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দুইবার আইজিপি ব্যাচপ্রাপ্ত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-১৯৯৮’ পুরস্কার ও ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১২ লাভ করেন।
রৌশন আরা রাজধানী ঢাকার মগবাজারের সাবেক টিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা-নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

Facebook Comments