মুক্তি পেলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক

অবশেষে ছাড়া পেয়েছেন ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোচিত দুই সাংবাদিক সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও। মিয়ানমারের কারাগারে ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্দি থাকার পর মঙ্গলবার তারা ছাড়া পান।
মঙ্গলবার সকালে ইয়াঙ্গুনের শহরতলীর একটি কারাগার থেকে তারা মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারের সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ তাদের আটক করা হয়েছিল। গত বছর তাদের ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় স্থানীয় এক আদালত। যদিও রয়টার্স দাবি করে আসছিল, তাদের দুই সাংবাদিক কোনও অপরাধ করেননি।
ইনসেইন কারাগার থেকে দুই সাংবাদিক যখন বের হয়ে আসেন তখন সেখানে অনেক সংবাদকর্মী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। ওয়া লোন তাদের মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। বার্তাকক্ষে যাওয়ার জন্য আমার আর তর সইছে না।
তবে এই দুই সাংবাদিকের মুক্তির বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ও রয়টার্সের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন মিয়ানমারে কর্মরত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও। পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালাতে গিয়েই এ মামলার কবলে পড়েন তারা।
আটক হওয়ার সময়ে ওই দুই সাংবাদিক ইন দীন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। সেনা অভিযানের মধ্যে এই রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্থানীয় অধিবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মিলে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়।
রয়টার্স ওই ঘটনার খবর প্রকাশের পর মিয়ানমার প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা হত্যার দায়ে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে কারাদণ্ড দেয়।
যদিও ওই দুই সাংবাদিককে মুক্তি দিতে আন্তর্জাতিক আহ্বান অগ্রাহ্য করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তখন জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শক ও সংস্থা এই সাংবাদিকদের বেকসুর খালাস দাবি করে আসছিল। এসব দাবির প্রতি তোয়াক্কা না করেই ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত।
নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। ডিসেম্বরে শেষ হয় আপিল শুনানি। আর ১১ জানুয়ারি দেওয়া হয় রায়। এতে আপিল খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখা হয়।কিন্তু নতুন বছর উপলক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মঙ্গলবার তারা ছাড়া পান।
এদিকে রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন মিয়ানমারের দুই রয়টার্স সাংবাদিক। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফরেইন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, পেন/বারবেই ফ্রিডম টু রাইট অ্যাওয়ার্ড, ওসবর্ন এলিয়ট প্রাইজ, ওয়ান ওয়ার্ল্ড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, জেমস ফলে মেডিল মেডাল ফর করেজ ইন জার্নালিজম, আইআরই’র ডন বোলস মেডাল এবং ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের আবুশন প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড।

Facebook Comments