আওয়ামী লীগ পরিচয়ে মসজিদের জমি দখল

রাজধানীর পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার জামে মসজিদের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।মসজিদের প্রায় সাড়ে দশ কাঠা জায়গার উপর নির্মিত দোকানপাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ওই সম্পত্তি দখল করা হয়।ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পত্তি হলেও এবং এই সম্পত্তির বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোক পরিচয়ে কয়েকজন মিলে দোকানপাট উচ্ছেদ করে সম্পত্তি দখল করে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,মসজিদের মোট সম্পত্তি প্রায় সাড়ে ১৪ কাঠা।এরমধ্যে চার কাঠার উপর মসজিদ।বাকি ১০ কাঠার উপর দুটি গোডাউন ও একটি চারতলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।গোডাউন ও মার্কেটের আয় দিয়ে মসজিদের ব্যয় নির্বাহ ও উন্নয়ন কাজে খরচ করা হয়।পুরো সম্পত্তি ওয়াক্ফ এস্টেটের অধীনে।মসজিদ কমিটিকে কেন্দ্র করে গত ৫-৬ বছর ধরে দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। একাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ওয়াক্ফ এস্টেট কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত কমিটির সভাপতি হাজী তাজ মোহাম্মদ।আরেকাংশের নেতৃত্বে স্থানীয় মহিউদ্দিন বুলু।সম্প্রতি বুলু নিজেকে মসজিদ কমিটির সভাপতি ঘোষণা করেন।বুলু নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিয়ে গত ২০ দিন ধরে মসজিদের মার্কেট ও গোডাউন গুঁড়িয়ে দিয়ে দশ কাঠার মত সম্পত্তি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
অভিযোগের বিষয়ে মহিউদ্দিন বুলু বলেন,মসজিদের কোনো সম্পত্তির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই।বরং মসজিদের নামে দোকানপাট বানিয়ে একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।মুসল্লি, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মান্নাফিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ,স্থানীয় সংসদ সদস্য (কাজী ফিরোজ রশীদ) ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে।বুলু বলেন,জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী,নোয়াখালীর চাটখিলের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এইচএম ইব্রাহিম,একসময়ের বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনীর প্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত আমার আত্মীয়।আপনি কি মসজিদ কমিটির সভাপতি—এই প্রশ্নের জবাবে বুলু বলেন,না,আমি সভাপতি নই, সভাপতি হলেন তাজ মোহাম্মদ।
বুলুর বক্তব্যের বিষয়ে ঢাকা-৬ আসনের জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন,মার্কেট ভাঙচুর করে সম্পত্তি দখল করার জন্য আমি কখনো বলিনি। বরং কিছুদিন আগে আমি ওই মসজিদে গিয়ে কমিটির লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে বৈঠক করে বলেছি—কেউ যেন মসজিদের সম্পত্তির দিকে নজর না দেয়।
স্থানীয়রা জানান,ভাঙচুরের কারণে মসজিদের প্রায় দেড় কোটি টাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পথে বসেছেন শতাধিক দোকান মালিক-কর্মচারী।অভিযোগ উঠেছে,মসজিদের দোকানঘর উচ্ছেদ করার পাশাপাশি আশ-পাশে কারো কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তিও দখল করা হচ্ছে।
ওয়াক্ফ এস্টেটের সহকারী প্রশাসক দেওয়ান আবদুস সামাদ বলেন,পুরো ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত।একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যারা দোকানপাট ভেঙে মসজিদের সম্পত্তি দখল করেছে,তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

Facebook Comments