শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি

শ্রীলঙ্কায় আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে শর্তসাপেক্ষে জরুরি অবস্থা জারির এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশটির প্রেসিডেন্টের মিডিয়া ইউনিট এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে সাংবিধানিক ধারা উল্লেখ করা হয়।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে শর্তাধীন জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে।’জরুরি অবস্থা কেবল সন্ত্রাসীদেরকেই টার্গেট করবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
শ্রীলংকা সরকার ঘোষিত মঙ্গলবারের রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের আগে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো। ধারণা করা হচ্ছে, জরুরি অবস্থার মধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারে শ্রীলঙ্কান সামরিক বাহিনী।এ হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৯০ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। হামলায় আহত হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরো হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র
শ্রীলঙ্কায় আরো সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
রোববার শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভ্রমণবিষয়ক সতর্কতা সংশোধন করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার এই সংশোধিত সতর্কতা জারি হয়।
সতর্কতায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছ, রোববারের হামলার পর শ্রীলঙ্কায় আরও হামলার ষড়যন্ত্র করছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। তারা সামান্য সতর্কতা বা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই হামলা চালাতে পারে।
সতর্কতায় বলা হয়, হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে পর্যটন স্থান, পরিবহনের কেন্দ্রস্থল, বিপণিবিতান, হোটেল, উপাসনালয়, বিমানবন্দর ও অন্যান্য জনবহুল স্থান।
শ্রীলঙ্কায় মসজিদে হামলা
গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার পর এবার শ্রীলংকায় মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেয়া হয়েছে মুসলিম মালিকানাধীন কয়েকটি দোকানে। নিরাপত্তাকর্মীদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এজেন্সিয়া ইএফই ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন। রোববার রাতে দেশটির পুত্তালুম জেলায় একটি মসজিদে পেট্রলবোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বান্দারাগামা এলাকায় মুসলিম মালিকানাধীন অন্তত দুটি দোকান ভাঙচুরের পর আগুন দেয়া হয়েছে।
হোটেলের কিউতে দাঁড়িয়েছিলো হামলাকারী
ইস্টার সানডের দিন সকালে কলম্বোর সিনামন গ্রান্ড হোটেলের ট্যাপ্রোবেন রেস্টুরেন্টে নাস্তার জন্য দীর্ঘ লাইনে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিল আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। আস্তে আস্তে লাইনের সামনে পৌঁছায় সে। রেস্টুরেন্টের কর্মী তার প্লেটে যখন খাবার তুলে দিতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের পিঠে থাকা বিস্ফোরক বোঝাই ব্যাগে বিস্ফোরণ ঘটায় সে। তার নাম মহম্মদ আজম মহম্মদ বলে জানা গেছে। সে শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তবে এটি তার ছদ্মনাম কি না, জানা যায়নি।
হোটেলের রেকর্ড বলছে, হামলার আগের দিন রাতে ওই পাঁচতারা হোটেলে চেক-ইন করেছিল মহম্মদ আজম মহম্মদ। সে ব্যবসার কাজে এসেছে বলে জানিয়েছিল। যে ঠিকানা দিয়েছিল, সেটি ভুয়া বলে জানতে পেরেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
নাম গোপন রাখার শর্তে সংবাদ সংস্থা এএফপি-র কাছে সিনামন গ্র্যান্ডের ‘ট্যাপ্রোবেন রেস্টুরেন্টের অন্যতম ম্যানেজার দাবি করেছেন, আজমই ওই আত্মঘাতী জঙ্গি।
২৪ জন আটক
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের নাম পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
শ্রীলংকার পুলিশ বলছে তাদের বিশ্বাস সানডেতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে যারা তাদের বড় অংশই একটি উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সাথে জড়িত। এই গোষ্ঠীটি স্থানীয়ভাবেই তাদের তৎপরতা চালায় বলে বলা হচ্ছে।
কলম্বোর বিমানবন্দর থেকে পাইপ বোমা উদ্ধার
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার পর রোববার কলম্বোর বন্দরনায়েক বিমানবন্দর থেকে একটি পাইপ বোমা উদ্ধার করেছে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন।
বিমানবন্দরটির প্রধান টার্মিনালের রাস্তায় পেতে রাখা পাইপ বোমাটি পরে বিমানবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা নিষ্ক্রিয় করেছে।
বিমানবাহিনীর মুখপাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন জিহান সেনেভিরত্নে জানান, উদ্ধার করা বোমাটি হাতে তৈরি করা। ৬ ফুট লম্বা একটি পাইপের মধ্যে বিস্ফোরক বোঝাই করা ছিল।
প্রসঙ্গত, রোববার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর তিনটি গির্জা এবং হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৫ শতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে ছয় ভারতীয়সহ অর্ধ শতাধিক বিদেশি রয়েছে বলেও জানা গেছে।
শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘ এক দশক ধরে চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর এটাই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। ওই গৃহযুদ্ধে দেশটিতে এক লাখের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো।একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধেও এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায় এর আগেও বেশ কিছু হামলার শিকার হয়েছে তবে সেসব হামলায় এত বেশি হতাহতের ঘটন ঘটেনি।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডের দিনে স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রায় দু ঘণ্টা ধরে একে এক আটটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এদের মধ্যে কমপক্ষে দুটি ছিলো আত্মঘাতী বোমা হামলা।
রাজধানীর কলম্বোর তিনটি জনপ্রিয় হোটেলে হামলা হয়। এছাড়া রাজধানীর বাইরে তিনটি শহরের তিনটি প্রধান গির্জায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। যে তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কোচকিকাদে, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এসব গির্জায় ইস্টার সানডে উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল।
তাছাড়া রাজধানীর সাংগ্রি লা, দ্য কিন্নামোন এবং কিংসবারি নামক আরও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হোটেল তিনটি রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এরপর আরো দুটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাগুলোর অধিকাংশই ছিল আত্মঘাতী।

Facebook Comments