ফায়ারম্যান সোহেল রানার বাড়িতে শোকের মাতম

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ারম্যান সোহেল রানার মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়াইল গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গরিব পরিবারটির ভরসা একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ভবিষ্যৎ ও স্বপ্ন। কোনো সান্ত্বনায় শান্ত হতে পারছে না স্বজন হারানোর কষ্টে দিশেহারা পরিবারটি।
তিন ভাইয়ের পড়াশোনা আর পুরো পরিবারের খরচ সবই ছিল সোহেল রানার কাঁধে। তাছাড়া জরাজীর্ণ বাড়িটি ভেঙে নতুন আরেকটি বাড়ি করার কথা চলছিল। তাকে বিয়ে দেয়ারও কথা হচ্ছিল। কিন্তু সোহেলের এক কথা, ভাইদের প্রতিষ্ঠিত না করে বিয়ে করবেন না তিনি। এসব কথাই বুক চাপড়ে বিলাপ করে বলছিলেন মা হালিমা খাতুন। প্রিয় সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে আবদার করছেন লোকজনের কাছে।
জানা যায়, চার ভাইয়ের মধ্যে সোহেল ছিলেন সবার বড়। ছোটভাই রুবেল ও উজ্জ্বল স্নাতকের ছাত্র। সবার ছোটভাই দিলুয়ার আগামী বছর এসএসসি দেবে। তাদের সবার আশা ও ভরসার জায়গা ছিল তাদের প্রিয় বড় ভাই সোহেল। ছুটি কাটিয়ে গত ২৩ মার্চ কর্মস্থলে ফিরে যান সোহেল রানা।
যাওয়ার আগে তিন ভাইকে ভালোভাবে পড়াশোনার করার কথা বলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা না করতে। তিনি বেঁচে থাকলে সবই হবে। পয়লা বৈশাখ বাড়িতে ফিরে সবাইকে নিয়ে বৈশাখি উৎসব করবেন। কিন্তু সোহেলকে হারিয়ে যেন নির্বাক হয়ে পড়েছেন সবাই।
বাবা নূরুল ইসলাম অসুস্থ ও মায়ের শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ-বিসুখ। বাবাকে হজ করিয়ে আনার কথা বলেছিলেন সোহেল। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোয় বাবা-মা দুজনই আশা করছিলেন তাদের সন্তান সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।২০১৫ সালে ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন সোহেল। সর্বশেষ কাজ করতেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে।
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন সোহেল। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত শুক্রবার চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (সোমবার) তার মৃত্যু হয়।
এদিকে সোহেলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন শোক জানিয়েছেন।

Facebook Comments