ক্যানসার চিকিৎসায় আরো সুখবর আসছে

দেশবাংলা ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। তাই আগের তুলনায় এই রোগে এখন বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৮ সালে সারা পৃথিবীতে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ৯৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর এক কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যাবে।
কিন্তু সুখবর হলো, ক্যানসারে আক্রান্ত হবার পরও সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সংখ্যাও বাড়ছে প্রতি বছর। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরাও প্রতি বছর ক্যানসার শনাক্ত ও চিকিৎসার নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসছেন প্রতিবছর।
চলুন তাহলে আগামী দিনে এই রোগের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কয়েকটি উদ্ভাবন জেনে নিই।
ক্যানসার কি আমাদের রক্তে থাকে?
ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়, তবে এতে মারা যাবার সম্ভাবনা কমে যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে মানুষের রক্তে।
কানাডার প্রিন্সেস মার্গারেট ক্যানসার সেন্টারের গবেষকেরা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নমুনায় জেনেটিক কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা বের করার নতুন এক পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। এতে নির্দিষ্ট কোন জিন কাজ করছে কিনা বা কোনটি হঠাৎ কাজ বন্ধ করেছে কিনা, সেটি বোঝা যাবে।
এর ফলে ক্যানসারের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভবই হবে না কেবল, বরং সেটি কোন ধরনের ক্যানসার তাও জানা যাবে।
যখন পেনিসিলিন নিতে হয়
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দিয়েই ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া এখন খুবই জনপ্রিয়। ২০১৮ সালে জিম অ্যালিসন মেডিসিনে নোবেল পেয়েছেন তার উদ্ভাবিত নতুন প্রক্রিয়া যাকে ‘পেনিসিলিন মূহুর্ত’ নামে সবাই চেনে।এই প্রক্রিয়া ক্যানসার চিকিৎসার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছাড়তে হবে ধূমপান
এর মূল কথা হচ্ছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হবে যাতে এটি শরীরের তৈরি হওয়া ক্যানসারের কোষগুলোকে অগ্রাহ্য করবে আর একই সময়ে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলো সেসব কোষ ধ্বংস করতে থাকবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এই পদ্ধতিতে উপকার পেয়েছেন।
ছোট ছোট টিউমার
গবেষকেরা দেখেছেন, যাদের শরীরে ছোট ছোট টিউমার থাকে বা বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছেন, এমন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ভালো কাজ করে।
যাদের শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি থাকে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যানসারের সঙ্গে বেশি লড়াই করতে পারে। এই উদ্ভাবনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রক্রিয়াটি মানুষ চাইলে তার খাদ্য আর ব্যয়ামের মাধ্যমে বেশি কার্যকর করে তুলতে পারে।
রোগ সারানোর চেয়ে রোগ ঠেকানো উত্তম
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্কটল্যান্ডে ১০ বছর আগে এক টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে অল্পবয়সী নারীদের সার্ভিক্যালে ক্যানসার হওয়া অনেকটাই ঠেকিয়ে দিয়েছে।
সেখানকার ১২ ও ১৩ বছর বয়েসী স্কুলের মেয়েদের রুটিন করে টিকা দেয়া শুরু হয়, যা সেক্সুয়ালি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঐ টিকার ফলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যানসার পূর্ব কোষের ধ্বংস সম্ভব।
জিন থেরাপি
আরেক সম্ভাবনাময় আবিষ্কার হতে যাচ্ছে, জিন থেরাপি দেবার ঔষধ। কিমরিয়া নামে এই ওষুধ এখন লিউকেমিয়া আক্রান্ত অল্প বয়েসী শিশুদের, যাদের অন্য কোন ওষুধে কাজ হচ্ছে না, তাদের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয়।
ফিলাডেলফিয়ায় আবিষ্কার হওয়া এই ওষুধের মাধ্যমে রোগীর একটি স্বাস্থ্যকর টি-সেল মানে রক্তের শ্বেত কণিকার একটি উপাদান যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কাজে লাগে, তাকে অপসারণ করে, সেটিকে ক্যানসার কোষ শনাক্তে কাজে লাগানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। যে বিষয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সিগারেট, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ওজন, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। এসব খাদ্যাভ্যাস বাদ দিতে হবে।
একই সঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে চাইলে ঝুঁকি এড়াতে চাইল স্বাস্থ্যকর একটি জীবনযাপন প্রক্রিয়া বেছে নিতে হবে। কারণ গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবীতে অন্তত ২০০ ধরনের ক্যানসার রয়েছে।
চিকিৎসায় সারছে স্তন ক্যানসার
এর মধ্যে অনেকগুলোই রয়েছে যেগুলো আক্রান্ত হবার পর মানুষের সুস্থ হয়ে যাবার হার অনেক বেশি, যেমন স্তন ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসার। সারা পৃথিবীতে ক্যানসার ঠেকানোর আরো কার্যকর প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

Facebook Comments