যেসব খাবার ডেকে আনছে অকাল মৃত্যু

দেশবাংলা ডেস্ক

কেবল ডায়েটের কারণে অকালে মারা যাচ্ছে প্রতি পাঁচজনের একজন মানুষ। অর্থাৎ ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে কমে যাচ্ছে জীবনের আয়ু কমে যাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে শুধু খাবারের কারণেই।
ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে সিগারেট বা ধূমপান। বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী এই ডায়েট বা খাবার।
দ্বিতীয় খাদ্য উপাদান হচ্ছে লবণ। এটি রুটি, সস বা মাংস- যেটার সাথেই দেয়া হোক না কেন, জীবনের আয়ু কমিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই সিগারেটের মতই লবনের আরেক নাম বিষ।
গবেষকরা বলছেন, শুধু মাত্র স্থূলতা নয়, বরং নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা ক্যানসারের মত জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
দ্যা গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজেস স্টাডি’নামের এক গবেষণায় উঠে এসেছে কেবল খ্যাদ্যাভ্যাসের কারণে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মারা যাচ্ছে কত না মানুষ।
যা খাবেন এবং খাবেন না
১. অতিরিক্ত লবণ: এই উপাদানটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ
২. কম দানাদার শস্য খাওয়া: এটিও ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ
৩. ফলমূল কম খাওয়া: ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ
এছাড়া বাদাম, বীজ, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাদ্য থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ এবং আঁশ জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম হওয়াটাও মৃত্যুর বড় কারণগুলোর অন্যতম।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুরে বিবিসিকে বলছেন,ডায়েটকেই আমরা স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান পরিচালক হিসেবে পেয়েছি। এটা সত্যিই অনেক গভীর।
লবণ কীভাবে মানুষকে হত্যা করছে?
এক কোটি দশ লাখ ডায়েট সম্পর্কিত মৃত্যুর মধ্যে এক কোটির মৃত্যু হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হার্টে ও রক্ত বহনকারী ধমনীর ওপর লবণের প্রভাব পড়ে সরাসরি যা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের ঝুঁকি তৈরি করে।
ডায়েট থেকে বাদ দিন লবণযুক্ত এসব মজাদার খাবার
সঠিক ডায়েট থেকে কত দূরে বিশ্ব?
আমরা কি সঠিক খাবার সঠিক পরিমাণে খাচ্ছি, এটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেমন, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার দিনে ২৫ গ্রাম খাওয়ার কথা বলা হলেও গড়ে মানুষ খাচ্ছে মাত্র ৩ গ্রাম। আবার দুধ খাওয়া উচিত ৪৪৩ গ্রাম অথচ মানুষ গ্রহণ করছে ৭১ গ্রাম। একই ভাবে দানাদার শস্য জাতীয় খাবার ১২৬ গ্রামের জায়গায় ২৯ গ্রাম খাচ্ছে।
অথচ লাল মাংস ২২ গ্রাম খাওয়া উচিত হলেও সেটি খাচ্ছে ২৭ গ্রাম, লবণ ৩.২ গ্রামের ওপর খাওয়া উচিত নয় কিন্তু সেটি গ্রহণ করছে ৬ গ্রাম আর প্রক্রিয়াজাত মাংস ২.১ গ্রামের স্থানে ৪ গ্রাম।
এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বেশি বাদ যাচ্ছে তা হলো – বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নিতা ফরোউহি বলছেন, ধারণা করা হয়, এসব খাবারের ছোট একটি প্যাকেটে একজনকে মোটা বানাতে পারে অথচ এগুলো সব ভালো ফ্যাটে ভর্তি। আর বেশিরভাগ লোকই এটাকে প্রধান খাবার ভাবতে পারেনা, তিনি বলেন।
রেড মিট বা লাল মাংস আর প্রক্রিয়াজাত করা মাংসের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবছর অনেক সংবাদ হয়।
প্রফেসর মারে বলছেন, কিন্তু সেটা শস্য, দানাদার ও আঁশজাতীয় খাবার ও ফলমূল কম খাওয়ার চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষকরা তাই মনে করছেন, স্বাস্থ্য নিয়ে যারা সচেতনতা তৈরি করেন তাদের চর্বি কিংবা সুগারের কথা কম বলে স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বেশি বলা উচিত।
কোনো দেশ ভালো করছে?
ফ্রান্স, স্পেন এবং ইসরায়েলের মতো কিছু দেশ ডায়েট সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আর দক্ষিণ পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার চিত্র উল্টো।
ইসরায়েলে যেখানে প্রতি এক লাখে এ ধরণের মৃত্যুর হার মাত্র ৮৯। সেখানে উজবেকিস্তানে ৪৯২ জন।
তবে প্রফেসর মারে বলছেন, জাপানে আগে ব্যাপক লবণ খাওয়ার প্রবণতা থাকলেও সেটি এখন নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।
তবে চীনারা প্রচুর পরিমাণে লবণ খায় এবং খাদ্য তালিকায় লবণ দিয়ে সস বেশি পছন্দ করে তারা। আর যুক্তরাজ্য এ বিষয়ে এখনো ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের পেছনে আছে। তবে এজন্য ফলমূল বা দানাদার ও শস্যজাতীয় খাবারের স্বল্পতাও কম দায়ী নয়। তাই বেশি লবণ ব্যবহার করে তৈরি খাবার বাদ দিন।
এ নিয়ে প্রফেসর মারে বলছেন,কোয়ালিটি ডায়েট হলো আসল কথা, আপনার ওজন কতো সেটা এখানে বিবেচ্য নয়।তিনি সবজি, আঁশজাতীয় খাবার ও ফলমূল খাওয়া বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রফেসর ফরউহি এবং মারে মনে করেন, ফ্যাট, সুগার বা সল্ট এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মানুষের উচিত ভালো খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়া।সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রাম বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত

Facebook Comments