উত্তাল খুলনা, শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২০

রেলপথ ও রাজপথ অবরোধ করে শ্রমিক আন্দোলনে খুলনার উত্তাল হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। ৯ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে চার ঘন্টার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা।
এদিকে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেন। সংঘর্ষে চার পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালান। এ সময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ শ্রমিক অবরোধের ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রেল চলাচলও ভোর থেকে বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করছেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার খালিশপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চল এবং যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে উঠেছে। সড়ক অবরোধ থাকায় মহাসড়কের যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা জানান, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলিম, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে বর্তমানে ১৩ হাজার ২৭১ শ্রমিক কাজ করছেন। মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে খুলনা অঞ্চলের সব পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, বিজেএমসির চেয়ারম্যান গত ২৮ মার্চের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের আন্দোলন চলবেই।
শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত সাপ্তাহিক মজুরি ও বেতন প্রদান, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি এবং উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ-গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।
এদিকে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বৃহস্পতিবারও ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেল স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি। ফলে যাত্রীরা স্টশনেই অবস্থান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। খুলনা স্টেশন ও প্লাটফর্মে সব বয়সী যাত্রীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন,বুধবারও সকাল ৬টা থেকে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি। ১২টা পর্যন্ত কোনও ট্রেনই ছাড়া সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে পাটকল শ্রমিক লীগ, সিবিএ–নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট, রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ চার দিনের কর্মসূচি পালন করছেন।

Facebook Comments