যে পানিতে পড়লেই পাথর হয় জীবন্ত প্রাণী!

দেশবাংলা ডেস্ক :

এ যেন আরব্য উপন্যাসের রূপকথা! টলটলে হ্রদের পানিতে পড়েই পাথর হয়ে যায় জীবন্ত প্রাণীগুলো। এটি কোনো গল্পকথা নয়, অতি বাস্তব। এই সুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর হ্রদের দেখা মিলবে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায়।ওই রহস্যময় হ্রদের কাছে গেলেই চোখে পড়বে এর পাড়ের সারিসারি পাথরের পশুপাখির মূর্তি। দেখে মনে হবে কোনো ভাস্করের নিখুঁত ভাস্কর্য। কোনো ক্রুটি নেই, সযত্নে তৈরি করা হয়েছে বাদুড়, মাছরাঙা, রাজহাঁস, ঈগলের মতো অনেক নাম না জানা প্রাণীর মূর্তি। এগুলো কিন্তু মূর্তি নয়, জীবন্ত জীবাশ্ম। আবার মমিও বলা যায় এগুলোকে।
তানজানিয়ার এই জলাশয়ের নাম নেট্রন হ্রদ। এই হ্রদের পানিতে নামলে কোনও প্রাণিই আর বেঁচে ফিরতে পারে না। আর যারাও বা দ্রুত তীরে উঠতে পারে তাদের অবস্থা হয় আরো ভয়াবহ। এর কারণ হচ্ছে হ্রদের ভয়ঙ্কর তাপমাত্রা।এই হ্রদটি আগুনেরম মত গরম। সার্বক্ষণিক ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে এতে। তাই কোনো পাখি বা জন্তু এতে পরলেই উঠার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। কোনোমতে তাপমাত্রার হাত থেকে বাঁচলেও সে বাঁচা হয় মৃত্যুর থেকেও ভয়ঙ্কর। ডাঙায় উঠার পর ধীরে ধীরে পাথরের মতো হয়ে যায় শরীর। এরপর সে পরিণত হয় প্রস্তর মূর্তিতে।


কিন্তু ভয়ঙ্কর এই বিভীষিকার কারণ কী? অগভীর নেট্রন হ্রদটি দৈর্ঘে ৫৭ কিলোমিটার ও প্রস্থে ২২ কিলোমিটার। জলের গভীরতা মাত্র ১০ ফুট। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে বহুকাল আগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ। যার ফলে, উত্তাপ সবসময় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। বেশি তাপমাত্রার ফলে, হ্রদের জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তার পরিবর্তে পড়ে থাকে লাভা, যা জলের মতোই তরল। এদিকে, সোডিয়াম এবং কার্বনেটের ক্ষারধর্মের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়ানো ব্যাকটেরিয়া নামের অণুজীব। এদের শরীরে আবার লাল রঞ্জক থাকে। ফলে দূর থেকে লেকের জল মনে হয় লাল রঙের। লেকের এই লাল রঙ আকৃষ্ট করে পাখিগুলিকে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, এই হ্রদে পাখিগুলিকে নামতে হয় না। এর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ই হ্রদের জলে পড়ে যায় তারা। কীভাবে জানেন?ওই হ্রদে জলের পরিবর্তে লাভা থাকায় সূর্যের রশ্মি হ্রদ থেকে বেশি পরিমাণ প্রতিফলিত হয়। ফলে পাখিগুলি যখন উপর দিয়ে উড়ে যায় তখন তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তীব্র আলোর ঝলকানিতে বিভ্রান্ত হয়েই হ্রদেই পড়ে যায় বাদুড় বা পাখিগুলি। পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক পাখির মৃত্যু হয়। কেউ যদি অতি কষ্টে ডাঙায় উঠেও পড়ে, তার কষ্ট আরো বাড়ে। লেকের জলের সোডা আর নুন লেগে যায় পাখি বা প্রাণীটির শরীরে। যা শুকোনোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কামড়ে ধরতে থাকে। আস্তে আস্তে পাথরে পরিণত হয় ওই লবন আর সোডা। একসময় পাখিগুলির শরীর পূর্ণাঙ্গ চুনাপাথরের মূর্তির রূপ নেয়।

Facebook Comments