সমতায় ফিরলো উইন্ডিজ

অনলাইন ডেস্ক: ন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে সমতা নিশ্চিত করলো সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ওয়ানডেতে হেরে দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে স্বাগতিক বাংলাদেশ তুলেছে ২৫৫ রান। জবাবে ২ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ক্যারিবীয়রা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরালো উইন্ডিজ। ১৪ ডিসেম্বর সিলেটে শেষ ওয়ানডেতে হবে সিরিজের মীমাংসা।

সফরকারীদের জয়ের নায়ক ওপেনার শাই হোপ। যিনি শুরু থেকেই পুরো ম্যাচকে টেনে তুলেছেন। তুলেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১৪৬ রান। ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে এই ক্যারিবিয়ানের হাতে।

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই ক্যারিবীয়ান পেসারদের তোপে পড়েন তামিম-লিটন জুটি। কিন্তু ম্যাচের ২য় ওভারে ওশানা থমাসের ১৪০+ গতির ডেলিভারি সরাসরি লিটনের পায়ের এঙ্কেলে আঘাত হানে। ব্যাথায় আর উঠে দাড়ানোর অবস্থা তৈরি করতে পারেননি লিটন। যার কারণে ইনজুরিতে পড়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। মাঠ থেকে সরাসরি হাসপাতাল। পরে নেমেছিলেন ব্যাটিংয়েও।

লিটনের পর তামিমের সঙ্গী হয়ে ক্রিজে এসেছেন ইমরুল কায়েস। তৃতীয় উইকেটে নামা ইমরুল টিকতে পারলেন না থমাসের পরের ওভারে ব্যক্তিগত শূন্য রানে বিদায় নেন তিনি। পরে মুশফিক-তামিমের দুর্দান্ত পার্টনারশিপে ঘুরে দাঁড়ায় টিম বাংলাদেশ। দু’জনই তুলে নেন অর্ধ-শতক। মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম ফিফটি পান, আর তামিম ৪৩তম ফিফটির দেখা পান। অর্ধশতক করেই দলীয় ১২৫ রানে বিশুকে উড়িয়ে মারতে যান তামিম। ফলাফল বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো কেমার রোচের তালুবন্দী। ৬৩ বলে অর্ধশতক করে সাজঘরে ফিরতে হল তাকে। এরপর দলের স্কোরকার্ডে ৭ রান যোগ হতেই ব্যক্তিগত ৬২ রানে ফিরলেন মুশফিক। ইনিংসের ২৬.৪ ওভারে থমাসের বলে শাই হোপের তালুবন্দী হন তিনি।

তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের ১১১ রানের জুটি ভাঙলে রানের চাকা শুরুতে শ্লথ হয়ে গিয়েছিলো। অভিজ্ঞ সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজেদের শততম ম্যাচে স্কোর বোর্ড সচল রেখে ব্যাট করেছেন। কিন্তু দলীয় ১৯৩ রানের মাথায় রোভম্যান পাওয়েলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তালুবন্দী হন হেটমেয়ারের। মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৩০ রানে।

থমাসের তৃতীয় শিকারে ব্যক্তিগত ৬ রানে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। সৌম্যের বিদায়ের পর আবারো ব্যাট হাতে নামেন লিটন দাস। সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম ফিফটি তুলে নেন। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন, ব্যক্তিগত ৮ রানে বিদায় নেন তিনি। দলীয় ২৩৪ রানের মাথায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ উইকেট হারায়।

ইনিংসের ৪৭তম ওভারে কেমার রোচের বলে বোল্ড হন সাকিব। দলীয় ২৩৯ রানের মাথায় বিদায় নেওয়ার আগে সাকিব ৬২ বলে ছয়টি চার আর একটি ছক্কায় ৬৫ রান করেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা ৬ রানে এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৫৫। ক্যারিবিয়ানদের সামনে ২৫৬ রানের টার্গেট।

২৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন চন্দরপল হেমরাজ। কিরণ পাওয়েলের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছিলেন চন্দরপল হেমরাজ। কিন্তু বাঁহাতি ওপেনার সুযোগটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ। ফিরেছেন ৩ রানে।

সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন ড্যারেন ব্রাভো আর শাই হোপ। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৫ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন তারা। অবশেষে চোখ রাঙানো জুটিটি ভেঙেছেন রুবেল হোসেন। বাঁহাতি ড্যারেন ব্রাভোকে বোকা বানিয়ে পেছন দিকে পড়া ডেলিভারিতে লেগস্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছেন এই পেসার।

দলীয় ১৩২ রানের মাথায় মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন মারলন স্যামুয়েলসকে। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে তিনি দুই চার, এক ছক্কায় ৪৫ বলে করেন ২৬ রান।

এরপর দলীয় ১৫৫ রানে রুবেল বিদায় করেন ১০ বলে ১৪ রান করা হেটমেয়ারকে। স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ হতেই টাইগার দলপতি মাশরাফি ফিরিয়ে দেন উইন্ডিজ দলপতি রোভম্যান পাওয়েলকে। দলীয় ১৮৫ রানের মাথায় আঘাত হানেন মোস্তাফিজ, ফিরিয়ে দেন রোস্টন চেজকে (৯)। এরপর কেমো পলের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন ওপেনার শাই হোপ। উইকেটে অপরাজিত থাকেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি করা শাই হোপ (১৪৫) এবং কেমো পল (১৩)। মাশরাফি ১০ ওভারে ৫২ রান খরচ করে নেন একটি উইকেট। সাকিব ১০ ওভারে ২৮ রানের বিনিময়ে কোনো উইকেট পাননি। মিরাজ ৯ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। রুবেল ৯ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট।

এই ম্যাচ দিয়ে অনন্য রেকর্ড ছুঁলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়ক হিসেবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার নজির গড়লেন তিনি। ৬৯ ম্যাচে টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়ে এতদিন রেকর্ডটি ছিল সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের দখলে। এবার তাকে ধরে ফেললেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক। এ ম্যাচ দিয়ে অন্যরকম সেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন টাইগার পঞ্চপাণ্ডব। একসঙ্গে ১০০তম ম্যাচ খেলছেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।

 

দেশবাংলাবিডি২৪/তা/

Facebook Comments